অপরাধ

কারাগার থেকে জুম মিটিং করলেন ডেসটিনির রফিকুল আমীন

ঢাকা, ০২ জুলাই – বহুল আলোচিত বহুস্তর বিপণন কোম্পানি (এমএলএম) ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের কর্ণধার মো. রফিকুল আমীন কারাগারে বসেই ব্যবসায়িক বৈঠক করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাগার মানে অসুস্থতার কারণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুই মাস আগে বহুমূত্র রোগের কারণে বিএসএমএমইউতে আসেন রফিকুল আমীন।

জুম প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বে বৈঠক হওয়ার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রফিকুল আমীনের নাম লেখা ইংরেজিতে ‘আর’। তিনি বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে বিএসএমএমইউ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে আগামী শনিবার।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ বিষয়ে বলেন, ‘বিয়য়টি আমরা জানতে পেরেছি। সত্যিই যদি কারাগারে বসে জুম বৈঠক করা হয়, এটা আরেকটা অপরাধ। এ কাজ করতে রফিকুল আমীনকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁরাও অন্যায় করেছেন।’

এদিকে কারা অধিদপ্তর এই জুম বৈঠক কীভাবে হলো তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ঢাকা বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক ( ডিআইজি প্রিজনস) তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান আজ রাতে এ তথ্য জানান।

রফিকুল আমীনের সঙ্গে জুম বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সোলায়মান মিয়াজী, আবদুল হালিম, মোস্তাক আহমেদ, মুসলেহউদ্দিন বাদশা, কফিল উদ্দিন, সুলতান মাহমুদ, মোহাম্মদ হেলাল, মনজুরুল হক প্রমুখের নাম রয়েছে। দেখা গেছে, রফিকুল আমীন তাঁদের উদ্দেশে বলছেন, দেশের সব থানায় এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে এবং অবশ্যই সৎ থাকতে হবে এই এজেন্টদের। আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, বিদেশ থেকে অনেক টাকা আনা হবে। ১০০ টাকার শেয়ারে ১ হাজার ৮০০ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ইত্যাদি।

দুদকের করা মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন আট বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। কয়েক বছর আগে আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা দিলে তিনি জামিন পেতে পারেন।

যোগাযোগ করলে বিএসএমএমইউর উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজ বিকেলে বলেন, প্রক্টর হাবিবুর রহমানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রক্টর হাবিবুর রহমান জানান, ‘রফিকুল আমীনের কাছে মোবাইল থাকার কথা নয়। এরপরও এর সত্যতা যাচাই করব। এ জন্য আমরা আগামী শনিবার একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করব। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুই মামলায় ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় আট বছর আগে। কোনো মামলারই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি।

আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে ডেসটিনির নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। রাজধানীতে থাকা ডেসটিনির সম্পদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজধানীর বাইরের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

অর্থ হাতিয়ে নিতে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ডিসি-এসপিদের ব্যবহার করেছেন রফিকুল আমীন। তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে জেলা, উপজেলাসহ সব অফিসে বড় বড় করে টাঙিয়ে রাখতেন তিনি। নতুন গ্রাহক-পরিবেশকদের আস্থা অর্জনের জন্য এ ছিল তাঁর কৌশল। অর্থাৎ সহজ-সরল মানুষদের বোঝানো যে এত বড় প্রভাবশালী মানুষ ডেসটিনির সঙ্গে আছেন।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবসায়ের অংশীদার করে, মাসোহারা দিয়ে এবং সেধে গিয়ে বড় বড় ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্পনসর করাও ছিল ডেসটিনির আরেক কৌশল। মুম্বাই চিত্রনায়ক শাহরুখ খান ও নায়িকা রানী মুখার্জিকে দেশে এনে অনুষ্ঠানও করেছিল ডেসটিনি। ২০১৩ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদনেই এসব কথা উঠে এসেছিল।

সূত্র : প্রথম আলো
এন এইচ, ০২ জুলাই

Back to top button