রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস এর নতুন রেকর্ড
চট্টগ্রাম, ০১ জুলাই – বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস অর্থবছর সমাপ্তিতে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। আর প্রবৃদ্ধির হার ২৩.২০ শতাংশ।
প্রতিকূল অবস্থাতেও এই অর্জন দেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতবহ। আর এ অর্জনকে বিশাল হিসাবে দেখছেন আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা। ফলে কাস্টমস হাউসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও উচ্ছ্বসিত।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কাস্টম হাউস রাজস্ব আয় করেছিল ৪১ হাজার ৮৫ লাখ ৩৮৪ কোটি টাকা। এবার আয় বেশি হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.২০ শতাংশ। গত এক বছর আগে সবোর্চ্চ ছিল ২১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে তুলনামূলক ২ শতাংশ। জুন মাসে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ২৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। জ্বালানি তেল, যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব অর্জিত হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৫ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৫ হাজার ৯৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৬০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৪৬১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৬ হাজার ২১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং জুনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, বাংলাদেশের আর কোনো সংস্থা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এককভাবে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছুঁতে পারেনি। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসই প্রথম এই রেকর্ড করলো। এটি একটি বড় রেকর্ড। গত যে কোনো রেকর্ড থেকে আমরা এগিয়ে। করোনা মহামারির এ সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন এটি সামান্য কথা নয়।
তিনি বলেন, আমি রাজস্ব বৃদ্ধিতে তিনটি জায়গায় জোর দিয়েছি। তা হলো- এইচএস কোড, পণ্যের মূল্য, মিস ঘোষণা বন্ধ। এর সুফল হিসেবে এতো টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হলো।
রাজস্ব আদায়, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, রাজস্ব ফাঁকি রোধ, চোরাচালান বন্ধ, দ্রুত পণ্য শুল্কায়ন এবং কাস্টমসের কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি আমি কাস্টমসের কাজে স্বচ্ছতা আনা, অনিয়ম রোধে কঠোরহস্ত ছিলাম।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির অর্জন। আমদানি বেড়েছে বলেই রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এ ব্যাপারে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে যথাযথ এসএস কোড এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার সুফল মিলেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এগিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশ এগিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জের মধ্যেই শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার সাহস না দেখাতেন, তাহলে রাজস্ব আয় যেমন কমত, পুরো অর্থনীতিই বিপর্যস্ত হতো। মানুষ চাকরিহারা হতো, অনাহারে থাকতে হতো।
তিনি বলেন, যে গতিতে আমরা এগোচ্ছি, সেটিকে ধরে রাখাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যবসা অব্যাহত থাকলে পণ্য আমদানি হবে, কারখানার চাকা ঘুরবে, বন্দর সচল থাকবে; যার ফলে রাজস্বও বাড়বে।
কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন বলেন, যেহেতু আমরা আমদানির পণ্য ক্লিয়ারিংয়ের জন্য কাস্টমসের সঙ্গে কাজ করি সেহেতু আমরাও এই অর্জনের অংশীদার। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে সহযোগী হতে পেরে গর্ববোধ করি। এ অর্জনকে তিনি সরকারের গতিশীল নেতৃত্বের প্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০১ জুলাই ২০২১