২২.৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে বাংলাদেশি স্টার্টআপের ইতিহাস
ঢাকা, ২০ অক্টোবর- যাত্রা শুরু হয়েছিল ফেইসবুক পেজের ব্যবসা দিয়ে। এরপর ডেলিভারি সেবা। সেখান থেকে মোবাইলের মাধ্যমে ই-লোন। এক সময় ছোট ছোট দোকানকে ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া দেয়ার পরিকল্পনা। আর তাতেই হলো ইতিহাস।
‘শপআপ’ নামের এই স্টার্টআপটি বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২২.৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড সংগ্রহ করেছে। দেশের প্রযুক্তি ইতিহাসে সিরিজ এ রাউন্ডের (বড় ধরনের ফান্ড) এমন ফান্ড কোনো প্রতিষ্ঠান আগে পায়নি।
মঙ্গলবার প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, এই ফান্ড সংগ্রহ করতে বাংলাদেশি স্টার্টআপটিকে সাহায্য করেছে সিকোইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া এবং ফ্লোরিশ ভেঞ্চারস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। উভয় কোম্পানিই এই প্রথম বাংলাদেশি স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত হল।
বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ খুচরা কেনাকাটা হয় ছোট দোকান থেকে। দেশে এমন দোকান আছে ৪.৫ মিলিয়নের মতো, যাদের অধিকাংশেরই ডিজিটাল ব্যবস্থা নেই।
শপআপ এই জায়গায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। তারা বিজনেস-টু-বিজনেস (বি২বি) প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আফিফ জামান টেকক্রাঞ্চকে বলেছেন, দোকানগুলোকে তারা তিনটি প্রধান সেবা দিয়ে থাকেন: নিরাপদ পাইকারি বাজারের তালিকা, কারিগরি সহায়তা (পণ্য পৌঁছে দেয়াসহ) এবং মূলধন।
আরও পড়ুন: নতুন কনটেন্ট তৈরির জন্য ভারতে ৩ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করছে নেটফ্লিক্স
ছোট দোকানগুলো প্রায়ই নানা ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়ে। পাইকারি বাজার থেকে অধিকাংশ সময় তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। সেগুলো আবার সময় মতো দোকানিরা পান না। যার কারণে তাদের ধারদেনা করে ব্যবসায় নেমেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এই বিষয়গুলো দেখভাল করে শপআপ।
শপআপের সঙ্গে ঠিক কতগুলো দোকান যুক্ত আছে, সেটি খোলাসা করেননি আসিফ। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ লাখের বেশি। লকডাউনের সময় দোকানগুলোর লেনদেনের হার অনেক বেড়েছে।
শপআপ অ্যামাজনের মতো সরাসরি ব্যবসায় নামতে চায় না। তারা মূলত দোকানগুলোকে দিয়েই ব্যবসা করাচ্ছে।
যেভাবে যাত্রা শুরু: ফেইসবুক ও তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা কাজে লাগিয়ে দেশের সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারীদের সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শপআপ চালু করেন আফিফ জামান, সিফাত সারোয়ার ও আতাউর রহিম চৌধুরী।
শপআপের আগে আতাউর রহিম চৌধুরী চালু করেছিলেন স্ম্যাশবোর্ড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোয়েরি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করত প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ডেলিভারি সেবার বিভিন্ন সমস্যার কথা জানতে পারেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগে পাস করা আতাউর। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে পাস করা বন্ধু আফিফ জামান ও সিফাত সারোয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনজনই একমত হন, ডেলিভারি সমস্যার সমাধান করলেই বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার চেহারা পাল্টে যাবে। দেরি না করে কলাবাগানের লেকসার্কাসে ছোট একটি কার্যালয়ে শপআপের কার্যক্রম শুরু করেন।
শুরুতে ফেইসবুক পেজ পরিচালনার পাশাপাশি পণ্যের অর্ডার ও ব্যবস্থাপনা সেবা দিতেন তারা। পরে যুক্ত করা হয় মার্চেন্ট ডেলিভারি সেবা। ধীরে ধীরে ব্যবসা উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের ঋণও দেওয়া শুরু করেন। চালু করেন মোবাইল অ্যাপও।
সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ২০ অক্টোবর