ক্রিকেট

সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের আচরণে আম্পায়ারিং ছাড়ছেন মনিরুজ্জামান

ঢাকা, ৩০ জুন – সদ্যই শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আম্পায়ারদের সঙ্গে অক্রিকেটীয় আচরণ করে আলোচনায় ছিলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। আম্পায়ারদের সঙ্গে দুই তারকা ক্রিকেটারের এমন আচরণ ক্রিকেটাঙ্গনে অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের এমন আচরণ ক্রিকেট ম্যাচে রীতিমতো বিরল দৃশ্য। তারকা ক্রিকেটারদের এমন আচরণে মর্মাহত আম্পায়াররা। প্রিমিয়ার লিগে দায়িত্ব পালন করা মনিরুজ্জামান তো আম্পায়রিংই ছেড়ে দিচ্ছেন।

মূলত নিজের সম্মান বাঁচাতে মনিরুজ্জামানের এমন সিদ্ধান্ত। প্রথম শ্রেণির সাবেক এই ক্রিকেটার মৌখিকভাবে ইতোমধ্যে আম্পায়ার্স কমিটি ও বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন তার সিদ্ধান্তের কথা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটারদের এমন আচরণ মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমার সম্মান আছে। আমি সম্মান রক্ষা করার জন্য আম্পায়ারিং ছেড়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আম্পায়ারদের সম্মান কমে গেছে। আমরা তো শুধু টাকার জন্য আম্পায়ারিং করি না। ভালো লাগার জায়গা থেকে করি। এখন সম্মান বাঁচাতেই সরে পড়া। আগামীর দিনগুলো আম্পায়ারদের জন্য অ্যালার্মিং। হয়তো এরচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হতে পারে। এ কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আম্পায়ারিং ছাড়ার।’

সুপার লিগের ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করাসহ অশোভন আচরণ করেন। পাশের উইকেটে দুইবার ঘুষি দিলেন। গড়াগড়ি খেলেন ২২ গজে! সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। নিজের ফিল্ডিং পজিশনে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। আম্পায়ার খেলা চালানোর জন্য বললেও তার ভ্রুক্ষেপ নেই। কয়েক মিনিট বিরতির পর মাহমুদউল্লাহ উঠে দাঁড়ান, এরপরই শুরু হয় ম্যাচ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি জন্ম দিয়েছে বিস্ময়ের।

ওই ম্যাচে টিভি আম্পায়ার ছিলেন মনিরুজ্জামান। এই ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ যেদিন অশোভন আচরণ করলো, সেদিন আমি টিভি আম্পায়ার ছিলাম। আমরা রিপোর্ট করেছিলাম। আমরা লিখেছি, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সে যে শারীরিক ভাষা দেখিয়েছে, সেটা সে করতে পারে না। সে কোড অব কন্ডাক্ট ভেঙেছে। আমরা রিপোর্ট, ম্যাচ রেফারি তার এখতিয়ার অনুযায়ী জরিমানা করেন।’

এর আগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মেজাজ হারান সাকিব। প্রথমে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে মেজাজ হারিয়ে স্টাম্পে লাথি, এরপর আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ানো এবং সবশেষ অদ্ভুত আচরণে তিন স্টাম্প উপড়ে আছাড় মারা!

সাকিবের এমন আচরণ নিয়ে মনিরুজ্জমানারে ভাষ্য, ‘সাকিব যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে, সেখানে আমি ছিলাম না, ছিলেন রিপন ভাই। উনিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। আমরা একসঙ্গে রাজশাহীর হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। আমি যদি সেখানে থাকতাম, আমি নিজেকে উনার জায়গাতে দাঁড় করিয়ে চিন্তা করেছি। আমার পুরো কমিউনিটিকে অসম্মান করা হয়েছে সবার সামনে। একজন দুজন দেখেছে, তা নয়। কোটি মানুষের সামনে এমন ঘটনা মানা কঠিন।’

কথা বলতে বলতে আবেগী হয়ে উঠলেন সাবেক এই ক্রিকেটারের কণ্ঠ একটু থেমে তিনি বললেন, ‘এবারের প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই রিঅ্যাক্ট করেছে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তারা ঠিকমতো নেয়নি। তারা সিদ্ধান্ত মানুক না মানুক, অসম্মান প্রদর্শন করলে সেটা আমাদের গায়ে লাগবেই। তাদের তো সুযোগ আছে ম্যাচ রেফারির কাছে রিপোর্ট করার। কিন্তু নিয়ম মতো না গিয়ে মাঠেই অশোভন আচরণ করটা কোনওভাবেই কী ঠিক হয়েছে?’

প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচের একটি ঘটনা উল্লেখ্য করে মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘সাকিব, মাহমুদউল্লাহ খুব বাজে রিঅ্যাক্ট করেছে। শেষ ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের কোনও ক্রিকেটার আম্পায়ারদের সঙ্গে হাত মেলায়নি। আমরাও তো পরিশ্রম করি। খেলোয়াড় মাঠে ঢোকার আগে আমরা ঢুকি, সবার শেষে বের হই। আমরা ভুল করি, সব আম্পায়ারেরই ভুল হয়। আইসিসির এলিট প্যানেলে যারা আছে, তাদেরও ভুল হয়। মানুষ ভুল করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে যদি আমরা না মানি, তাহলে সমস্যা।’

প্রসঙ্গত, বিসিবির বেতনভুক্ত আম্পায়ার না হলেও আম্পায়ারিংয়ে মনিরুজ্জামানের সুনাম রয়েছে। কখনও কোনও বিতর্কে তার নাম জড়ায়নি। ২০০৭ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে আম্পায়ারিং শুরু করেন তিনি।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এইচ, ৩০ জুন

Back to top button