নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা দায়িত্ব পালন করবেন
ঢাকা, ৩০ জুন – করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররা দায়িত্ব পালন করবেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুজাফর রিপন স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়।
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় জনসমাগম এড়ানোর লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। অতএব মেয়াদোত্তীর্ণ এবং আশু মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এমন ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠান না হাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ১০১ ধারা মোতাবেক প্রশাসনিক অসুবিধা দূরীকরণার্থে বিদ্যমান ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো’।
কবে নাগাদ ভোট হবে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আমরাই তাদের নির্বাচন না করার জন্য অনুরোধ করেছি’।
তিনি বলেন, ‘ সব স্বাভাবিক হলে, আমরা যখন নির্বাচন করার উপযোগী হব; তখন নির্বাচন করা যেতে পারে’।
এ কমিশনার বলেন, ‘আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতেই তারা কিন্তু এই এক্সটেনশনটা দিয়েছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্ধারিত সময়ে ইউপি নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি ইসি। নির্ধারিত সময়ের পরের ৯০ দিনের মধ্যে প্রথম ধাপে গত (২১ জুন) ২০৪ ইউপিতে ভোট সম্পন্ন করেছে কমিশন। চলতি মাসে নির্ধারিত সময়ের পরবর্তী ৯০ দিনও পার হয়ে যাচ্ছে আরো এক হাজারের বেশি ইউপির। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা না গেলে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যায়।
পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন আয়োজন করা না গেলে ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ১০১ ধারা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে জানাতে হয়- বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররাই পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউপির ভোটের তফসিল ঘোষণার পর করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ এপ্রিল এসব নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। প্রথম ধাপে ইউপিতে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল ১১ এপ্রিল। পরবর্তীতে গত ২ জুন এসব ইউপিতে ২১ জুন ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করে কমিশন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ১০ জুন বৈঠক করে সেখান থেকে ১৬৩ ইউপির ভোট আবার স্থগিত করে ২০৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
দেশে সাড়ে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে ২২ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে চার হাজারের বেশি ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় ও সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ২৯ ধারায় পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কার্যকাল বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পরিষদের মেয়াদ থাকবে। পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্য কোনো কারণে নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০০ এর ১০১ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই আইনের বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার উক্ত অসুবিধা দূরীকরণার্থে, আদেশ দ্বারা, প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে’।
সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ৩০ জুন