সিলেটে গির্জার জমিতে ২২ তলা ভবন, সাবেক সাব রেজিস্ট্রারের নামে মামলা
সিলেট, ২৯ জুন – সিলেটে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের গীর্জার জায়গা জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে বহুতল নির্মাণের অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত এক সাব রেজিস্টারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুুদক।
সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় ওই ৮০ শতক জায়গা দখল করে ২২ তলা ভভন নির্মাণ করছে ‘ইম্পালস বিল্ডার্স’ নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ৪ তলা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে গির্জার জায়গা দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল কাগজপত্র তৈরির প্রমান পাওয়া গেছে। এতে সাবেক এক সাব রেজিস্টার, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি অফিসের এক কানুনগোর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্তে প্রাথমিক সতত্য পেয়ে ভূমি অফিসের এই তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- সিলেট সদর ভূমি অফিসের সাবেক সাবরেজিস্টার (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী (৬৭), ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (৬০), মিউনিসিপালিটি সিলেট সদর ভূমি অফিসের সাবেক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (অবসরপ্রাপ্ত) আসবাহ উদ্দিন (৬০), সদর ভূমি অফিসের সাবেক কানুনগো (বরখাস্তকৃত) মলয় কর (৫৫)।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন।
মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির মাধ্যমে জমির জাল দলির তৈরির প্রমাণ পেয়েছি। এরপর মামলা করা হয়েছে। এখন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মিউনিসিপালিটি মৌজার জে. এল নং-৯১ এর ৪০০৮ এবং ৪০০৯ দাগে ৭৬ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা মূল্যের গির্জার ৮০ শতক জায়গা জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করেন। যা দন্ডবিধি ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের (৫)২ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে মামলা দাখিল করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, হেরেঙ্গা লুসাই নামে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতেন এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন লুসাই সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিউনিসিপালিটি মৌজায় ৪০০৮ এবং ৪০০৯ নং দাগে ১.৩৭০১ একর ভূমি পুলিশলাইন্সে বসবাসরত খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রার্থনা এবং মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়। গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হেরেঙ্গা লুসাইকে এই গির্জা সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়। পরবর্তীতে এ গির্জায় সমাহিত হন হেরেঙ্গা লুসাই। এরপর এ জায়গার দেখভালের দায়িত্ব পড়ে হেরেঙ্গা লুসাইর উত্তরসূরি যৌবেল লুসাইয়ের কাধে। কিন্তু তার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে ইম্পালস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম নানা কৌশলে এখানকার ৮০ শতক জায়গা আত্মসাৎ করার চেষ্টা শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি এ ভূমি লিজ নেন এবং পরবর্তীতে তিনি একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করেন। এভাবে তিনি কৌশল অবলম্বন করে এ ভূমিকে কেন্দ্র করে ১৫ টি রেজিস্টার্ড লিজনামা, ১ টি রেজিস্টার্ড বায়নামা, ১ টি সাফকাবাল বেআইনি দলিল, ১ টি আনরেজিস্টার্ড লিজনামা সম্পাদিত করে পরবর্তীতে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সাবেক সাবরেজিস্ট্রার, বরখাস্তকৃত কানুনগো ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে তা নিজের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নেন। এসব কাগজপত্রের বলে খ্রিষ্টানদের গির্জার ৮০ শতক জায়গা তিনি ভোগদখল শুরু করেন।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ইম্পালস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৬ সালে আমি এখানকার কিছু জায়গা কিনেছি। কিছু জায়গা লিজ নিয়েছি। ৮০ শতক জায়গা কিনে আমি ৩২ শতকের উপর ভবন করছি। এখানে জাল-জালিয়াতির কিছু নেই।
তিনি বলে, দুদক মামলা করেছে বলে শুনেছি। এখন চার্জশিট হবে, তার পর আদালত বিচার করে রায় দিবেন। আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।
এসব তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে দাবি করে সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এখানে এ জায়গার উত্তরাধিকার এখন কেউ নেই। কিছুদিন পর পর কিছু মানুষ তাদের ধরে এনে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়ায় আমাকে হয়রানি করাতে।’
সরেজমিনে রিকাবীবাজার এলাকায় গিয়ে গিয়ে দেখা যায় নির্মাণাধীন ‘ইম্পালস বিল্ডার্স’ নামক এ ভবনের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে ৪ তলা পর্যন্ত পয়ন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি।
সূত্র : সিলেটটুডে২৪
এম এউ, ২৯ জুন