মাগুরায় আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকেই করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি
মাগুরা, ২৯ জুন- মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড এখন নামেই আইসোলেশন ওয়ার্ড। বিধিনিষেধ বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তোয়াক্কা নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের স্বজনের ভিড়ে এই ওয়ার্ডটি এখন সংক্রমণ ছড়ানোর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের বিষয়েও মানা হচ্ছে না কোনো সতর্কতা। স্বজনরাই বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মৃতদেহ। সরেজমিন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে এসব দৃশ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে রোগীর স্বজনদের অসচেতনতার পাশাপাশি জনবল সংকটকে দায়ী করছেন।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ৩২ জন রোগী। অধিকাংশ রোগীকে ঘিরে স্বজনদের ভিড়। সদর উপজেলার পুখুরিয়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সী এক রোগীর সঙ্গে একই শয্যায় বসে থাকতে দেখা গেছে তার ছেলেসহ কয়েকজনকে। একই অবস্থা অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও। এদিন সকালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শহরের পশু হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী অমল সাহা। কোনো সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই তাকে নিয়ে একই ভ্যানে হাসপাতাল ছেড়েছেন স্বজনরা।
আইসোলেশন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সেবিকা সালমা পারভিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডে কোনো ওয়ার্ড বয় নেই। একা তাকেই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনরা কিছুতেই কথা শুনছেন না। অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয় নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারীদের হাতাহাতি পর্যন্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা বিকাশ কুমার শিকদার বলেন, ‘হাসপাতালে সব বিভাগে ব্যাপক জনবল সংকট রয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি’।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার স্বপন কুমার জানান, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রবেশের বিষয়ে দেখভালের জন্য সেখানে একজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ যদিও সরেজমিন সেখানে কোনো কর্মচারীকে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল সোমবারের তথ্যমতে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় শতভাগ। জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৪০ জন।
জেলা সিভিল সার্জনের অফিসের তথ্যমতে, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গতকাল ২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ১৪ জুন থেকে জেলা শহর ও মহম্মদপুর উপজেলায় লকডাউন চলছে।
এদিকে জেলায় ব্যাপক হারে জ্বর ও সর্দি কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এসব উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে আসছেন। তবে এসব মানুষের মধ্যে করোনা পরীক্ষার প্রবণতা কম। যেটি ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ‘মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ মোট ৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার বুথ রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। তবে করোনা নিয়ে এক ধরনের ভীতি ও গুজবের কারণে অনেকে পরীক্ষা না করে ইচ্ছামতো চিকিৎসা নিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন’।
তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
এস সি/২৯ জুন