ঢাকা

বাবার জন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ৮ বছরের মিম

ঢাকা, ২৯ জুন- মর্গের ট্রলিতে সাদা কাপড়ে ঢাকা আবুল কাশেম মোল্লার মৃতদেহ। স্ত্রী সোহাগী বেগমসহ স্বজনরা কাপড় উঠিয়ে দেখছেন প্রিয়জনের লাশ। আর্তনাদ করছেন সবাই। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ৮ বছরের মিম। তাকে বাবার মুখ দেখার জন্য বলছিলেন খালু জামাল উদ্দিন। এ সময় ‘না’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে মেয়েটি।

চোখ মুছতে মুছতে মিম বলে, ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে আব্বুর শরীর! মুখে রক্ত লেগে আছে। এভাবে আব্বুকে দেখতে পারব না। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে আব্বুর জন্য। আব্বু সারাদিন বাস চালাত। রাতে যখন বাসায় ফিরত, আমার জন্য কিছু না কিছু খাবার নিয়ে ঢুকত। আমাকে নিজের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসত। আব্বু আমার কলিজা। রাতে আব্বু বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আমি ঘুমোইনি কখনও। আব্বুর রক্তমাখা মুখ আমি দেখব কী করে!

শিশুটির কথা শুনে উপস্থিত সবাই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখে পানি চলে আসে অনেকের। এই দৃশ্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের।
গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ম্ফোরণে বাসের স্টিয়ারিং হাতেই প্রাণ হারান চালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫)। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। স্ত্রী সোহাগী বেগম ও একমাত্র সন্তান মিমকে নিয়ে বসবাস করতেন গাজীপুরের সালনায়। আজমেরী পরিবহনের একটি বাস বছর দেড়েক আগে কিনে নিজেই চালাতেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্র্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় যখন মগবাজারে বিস্ম্ফোরণ ঘটে তখন সেখানে যানজটে বাস নিয়ে আটকে ছিলেন আবুল কাশেম। বিস্ম্ফোরণে তার বাসের জানালা ও সামনে-পেছনের সব গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। যাত্রীরাও আহত হন। আবুল কাশেম আহত অবস্থায় বাসের স্টিয়ারিং হাতেই সিটে বসে ছিলেন। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। প্রথমে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

কাশেমের ভায়রা জামাল উদ্দিন জানান, কিশোর বয়সেই গাড়ির হেলপারি শুরু করেছিলেন কাশেম। পরে প্রায় ২৩ বছর বাসচালক হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির বাস চালান। বছর দেড়েক আগে ১৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আজমেরী পরিবহনের ওই বাসটি কিনে নিজেই চালাচ্ছিলেন। বিস্ম্ফোরণে আজমেরী পরিবহনের একটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- রাতে টেলিভিশনে এ খবর দেখে সোহাগী বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আবুল কাশেমকে ফোন করেন। ফোন বন্ধ পান। তখন তিনি স্বজনদের বিষয়টি জানান।

সোহাগী বেগম জানান, ঘটনার ১০-১৫ মিনিট আগে স্বামীর সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। সে সময় কাশেম তাকে জানিয়েছিলেন, মগবজারের জ্যামে বসে আছেন। সোহাগী বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই টিভিতে দেখি মগবাজারে বিস্ম্ফোরণ ঘটেছে। আজমেরী বাসের গ্লাস ভেঙেচুরে গেছে। এর পর ফোন করতে থাকি। কিন্তু ফোন বন্ধ পাই বারবার। তিনি জানান, বাসের ঋণের টাকা এখনও পরিশোধ হয়নি। এই টাকা কীভাবে তিনি পরিশোধ করবেন, সংসার চালাবেন কী করে?

জামাল উদ্দিন বলেন, তারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কাশেমকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কাশেমের লাশ পাওয়া যায়।
ছোট্ট মিম জানায়, তার বাবা সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই তার সঙ্গে দেখা করে আসত। একাধিকবার কাশেমের সঙ্গে ফোনে কথা হতো মিম ও মিমের মায়ের। রোববার বিকেলে তিনি ফোন করেছিলেন স্ত্রীকে। তখন মিমের সঙ্গেও কথা হয়। মেয়েকে তিনি সাবধানে থাকতে বলেছিলেন এবং রাতে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র: সমকাল
এস সি/২৯ জুন

Back to top button