জাতীয়

সরকারের উচিত ছিল আগে রামপাল ও বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা: আনু মুহাম্মদ

ঢাকা, ২৯ জুন – সম্প্রতি ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সোমবার ওই সরকারি ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্ম জোটের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, পরিবেশের কথা চিন্তা করেই যদি সরকার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করতো, তবে সবার আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা উচিত ছিল। কারণ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশ ও সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এখন ১০টি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে, ভবিষ্যতে আরও এমন অনেক প্রকল্প বাতিল হবে। এটাই অনিবার্য ভবিষ্যৎ। যেগুলো বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোতে হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অর্থায়ন করছে না, না হয় পৃষ্ঠপোষক কোম্পানিগুলো সরে যাচ্ছে। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের আর্থিক, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেকোনো ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ জন্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রগুলো কয়লাবিদ্যুৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘রামপাল ছাড়া বাতিলের তালিকায় প্রথমে থাকা উচিত ছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র (প্রথম পর্যায়)। মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়ানো বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, মাতারবাড়িতে কোহেলিয়া নদী ভরাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চলছে। এগুলোকে সবার আগে বাতিল করা উচিত ছিল।’

‘বাতিল হওয়া কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিণত করা হতে পারে’- এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কয়লাবিদ্যুৎ অচল হয়ে যাওয়ায় এলএনজি লবিস্টরা এখন অনেক বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। এ জন্য দেশীয় গ্যাসের আবিষ্কার ও উত্তোলন বন্ধ রেখে এবং নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিদেশি এলএনজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকার অনেক বেশি উৎসাহী।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অবশেষে সরকার বুঝতে পেরেছে যে, পরিবেশ দূষণকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসতে হবে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। দেশি-বিদেশি জলবায়ু কর্মীরা অনেক দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু, এস আলম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য সরকার বাঁশখালীর মতো রক্তে ভেজা প্রকল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা দুঃখজনক।’

বাতিল করা ১০টি প্রকল্পের মতো বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রও বাতিল করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্ম জোটের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব হাসান মেহেদী। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য সাজিয়া শারমিন।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ২৯ জুন

Back to top button