বাংলাদেশ টিকা কূটনীতিতে সফল!
ঢাকা, ২৯ জুন – মহামারি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধী টিকা কূটনীতির উদ্যোগে সফল হলো বাংলাদেশ। বহুমুখী উৎস থেকে টিকাপ্রাপ্তির নিশ্চিয়তা এসেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে আসছে টিকার বড় চালান। টিকা পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই কূটনৈতিক সাফল্য এলো। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মেহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, আমাদের টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। টিকা যেহেতু আসছে সেহেতু ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। যার ফলে টিকার মাধ্যমে দেশের বড় জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত করতে পারব। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চাই। পাশাপাশি যে শ্রমিকরা বিদেশে যাবেন তাদের টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসীদের ভ্যাকসিন দিতে।
ডা. আবুল বাশার বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় যত মানুষ এদেশে মারা গেছেন, তার তিণ গুণ মানুষ প্রতি বছর মারা যায় যক্ষ্মায়। এছাড়া যক্ষ্মা রোগীদের ১ শতাংশ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়।
বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি চলছে, আমরাও সেই রাজনীতির শিকার, তবে টিকা আনার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, টিকা কূটনীতির উদ্যোগ নিয়ে লেগে থাকার ফলে বহুমুখী উৎস থেকে বাংলাদেশ টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে হঠাৎ কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো টিকা সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা কোভিড টিকাকে জনসাধারণের সম্পত্তি হওয়ার দাবি করেছি। আর এটি তৈরির প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে নেওয়াও উচিত যেন কম মূল্যে সব দেশ উৎপাদনে যেতে পারে।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে করোনার টিকা উৎপাদন কারখানা গোপালগঞ্জে করা হবে। ভ্যাকসিনে নির্ভরশীল হতে চায় বাংলাদেশ। তাই টিকা উৎপাদন কারখানা হবে গোপালগঞ্জে। কয়েক দিনের মধ্যেই চীনের ভ্যাকসিনও চলে আসবে এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে লকডাউন কার্যকর হলে এবং সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে খুব দ্রুতই করেনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
করোনা মহামারি এখন বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই সুবিধাকেই সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে চীন ও রাশিয়া। কেবল পররাষ্ট্র নীতিমালা নিয়ে আপসের মাধ্যমে নয় বরং টিকার বদলে তারা নিজেদের অনুকূলে ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনেও মনোযোগ দিয়েছে। ভারতের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। চীন ও রাশিয়াও একইভাবে টিকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় স্পুৎনিক-ভি পাঠানোর শর্তে সিরিয়ায় আটক রাশিয়ান নাগরিকের মুক্তির দাবি তুলেছিল রাশিয়া। এই টিকা রাজনীতির কল্যাণেই রাশিয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এমনকি ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশেও সখ্য গড়ে তুলেছে দেশটি। একইভাবে মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলো নিজেদের ভূরাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশে রাশিয়া ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। এদিকে নতুন করে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, টিকা কূটনীতির মাধ্যমে তাইওয়ানের বিষয়ে প্যারাগুয়ের অবস্থান পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে সফল হয়েছে চীন। এ ছাড়া টিকার চালানের পূর্বশর্ত হিসেবে ব্রাজিলের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশটির ফাইভ-জির বাজার হুয়াওয়ের জন্য উন্মুক্ত করেছে চীন।
কেবল বাংলাদেশই নয়, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানির মতো নাক উঁচু পশ্চিমের অনেক দেশই এখন চীন ও রাশিয়ার টিকা নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিমা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রথম দিকে চীন ও রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনার টিকাকে পাত্তা না দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। কার্যত কোনো উপায় না পেয়েই তারা পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরের টিকা নেওয়ার গরিমা থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। অপরদিকে চীনও ঘোষণা করেছে, তাদের সিনোভ্যাক এবং সিনোফার্ম ভ্যাকসিন দুটি ‘বৈশ্বিক জনসাধারণের সম্পদ’।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, এই দুই রাষ্ট্রের উদ্ভাবিত করোনার টিকাও বেশ কার্যকর। রাশিয়ার টিকা স্পুৎনিক-ভির মানবদেহে পরীক্ষার অন্তর্বর্তী ফল প্রকাশ করেছে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট। এতে দেখা গেছে, টিকাটি ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর।
অপরদিকে টিকাটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দাবি স্পুৎনিক-ভির কার্যকারিতা আরো বেশি। প্রায় ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
সম্প্রতি টিকার আরেকটি সংস্করণ এনেছে রাশিয়া। এক ডোজের এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে স্পুৎনিক লাইট। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা প্রতিরোধে এক ডোজের এই টিকা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ এই টিকাটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ২৯ জুন