জাতীয়

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আসছে চীনা টিকার বড় চালান

ঢাকা, ২৮ জুন – অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার দ্বিতীয় ডোজের প্রায় ১৫ লাখ টিকার সংকট সহসা কাটছে না। তবে সূত্রের খবর, আগামী মাসেই আসছে চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ টিকা। এ ছাড়া টিকার এই সংকটকালে বাংলাদেশকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ২৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দরিদ্র ও মধ্যআয়ের দেশগুলোয় টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন বা গ্যাভির মাধ্যমে অনুদান হিসেবে ওই টিকা দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় মার্কিন সরকার জানিয়েছে, তারা ৭-১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশকে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা পাঠাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমও গতকাল সোমবার বলেছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমরা বড় অ্যামাউন্টের ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি।

সূত্রমতে, বিভিন্ন উৎস থেকে জুলাইয়ে বিপুল পরিমাণ টিকা পাওয়া গেলেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার দ্বিতীয় ডোজের প্রায় ১৫ লাখ টিকার সংকট এখনই কাটছে না। ভারতের সেরাম কোম্পানির উৎপাদিত টিকা কবে পাওয়া যাবে সেটি নিশ্চিত নয়। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে শুরু হয় গণটিকাদান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অক্টোবরের আগে সেরামের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও জানিয়েছেন, সেরামের টিকা প্রদানের সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে আশার দিক হচ্ছে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের নির্ধারিত সময়ে টিকাদান নিশ্চিতে এগিয়ে এসেছে ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স। কোভ্যাক্স থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ টিকাপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তবে কবে নাগাদ এগুলো হাতে আসবে বা কোন দেশ থেকে তা সরবরাহ করা হবে, গতকাল পর্যন্ত সেটা নিশ্চিত করেনি কোভ্যাক্স।

টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় যে ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসছে, তাতে বিদেশগামী রেমিট্যান্সযোদ্ধারা অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া যারা জটিল রোগের কারণে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব মানুষ রেমিট্যান্স সংগ্রামে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব লোকের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার আছে বা অন্য কোনো রোগের জন্য ওষুধ সেবন করেন, যেটার জন্য তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, সেই সব রোগী যখন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বাড়ছে। তাদেরও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তাদের উৎপাদিত টিকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চতুর্মুখী তৎপরতা শুরু করে ঢাকা। টাকা দিয়ে টিকা কেনার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন করতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়াও শুরু করে ঢাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকার ঘাটতি পূরণে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে অনুরোধ করে চলেছে বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, টিকাদান অব্যাহত রাখতে চতুর্মুখী তৎপরতার অংশ হিসেবে চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে চীনের আরেকটি কোম্পানি সিনোভ্যাকের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে সরকার। তবে এ আলোচনা কবে নাগাদ শেষ হবে এবং কবে নাগাদ টিকা কেনার চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে- তা নিশ্চিত নয়। রাশিয়া থেকেও এক কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে সরকার। দ্রুত আলোচনা শেষ করে জুলাইয়ে স্পুটনিক-ভি টিকার প্রথম চালান পেতে আগ্রহী ঢাকা। সবকিছু ঠিকমতো এগোলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসবে। এ লক্ষ্যে স্পুটনিক-ভির উৎপাদক ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (সিআরডিআইএফ) সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্পুটনিক-ভি কেনার বিষয়ে কয়েক দফা ডকুমেন্ট আদান-প্রদান হয়েছে এবং শিগগিরই চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ টিকা পাবে, সেটি নিশ্চিত নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিনোফার্মার সঙ্গে আলোচনা আগেই শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, চুক্তি শেষে জুলাই মাসে এ প্রতিষ্ঠানের টিকা আসবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাও এগিয়েছে অনেক দূর।

সূত্র: আমাদের সময়
এন এ/ ২৮ জুন

Back to top button