ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য জানায়, ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রতিটি মানুষ স্বস্ব সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে দেশে বা বিদেশে ভ্রমণ বা পর্যটনের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্রময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত। নৈসর্গিক সৃষ্টিলীলা দর্শন, রিযিক উপার্জন, জ্ঞান অর্জন, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ বা পর্যটনের নির্দেশ রয়েছে ইসলামে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আপনি বলুন (হে প্রিয় নবি) তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কীভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। তারপর আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। (সূরা আনকাবুত-২০) অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়। (সূরা হজ্জ-৪৬)
ভ্রমণ বা পর্যটন বলতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনকে বোঝানো হয়। ভ্রমণ হতে পারে ইবাদত, বিনোদন, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে গমনের উদ্দেশ্যে। ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক যেকোন ধরনের সফর বা জ্ঞানার্জনের যাত্রা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞানার্জন করো। অন্যত্র বলেছেন, যে জ্ঞানার্জনের জন্য ঘর থেকে পথে বের হবে, সে যেন আল্লাহর পথে বের হলো। (মুসলিম)
আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টিকে যে একবার অন্তরের চোখে দেখেছে এবং গভীরভাবে চিন্তা করেছে, সেই মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করে লুটিয়ে পড়েছে সেজদায়। তার সব অহঙ্কার, আমিত্ব, আভিজাত্য ডুবেছে চোখের পানিতে। প্রেমময় স্রষ্টার সৃষ্ট জীবের সেবায় সে আত্মনিয়োগ করেছে। নামাজ আদায়ের পরপরই সে জমিনে ছড়িয়ে পড়ছে আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে। সৃষ্টির প্রতি যার অন্তরে দয়া আছে তার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দয়া থাকবে। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
আরও পড়ুন: সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনার গুরুত্ব
ইবনে বতুতা বলেছেন, ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য জানায়, ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রতিটি মানুষ স্বস্ব সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে দেশে বা বিদেশে ভ্রমণ বা পর্যটনের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্রময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত। নৈসর্গিক সৃষ্টিলীলা দর্শন, রিযিক উপার্জন, জ্ঞান অর্জন, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ বা পর্যটনের নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে পর্যটন করে পুরো পর্যটনেই তার সওয়াব অর্জন হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে বা পর্যটনে যাওয়ায় কল্যাণ ও পুণ্য নিহিত রয়েছে।
সফর তিন প্রকার-
এক. প্রশংসনীয় সফর :
যে সফর আল্লাহর আদেশ বা নিষেধ র্কাযকর করার উদ্দেশ্যে হয়। যেমন-হজ্ব-ওমরাহ পালন অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, দ্বীনের দাওয়াত, ইলমেদ্বীন শিক্ষা, আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখা অথবা দ্বীনি ভাইদের সাথে সাক্ষাত ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সফর করা।
দুই. নিন্দনীয় সফর :
এমন কোন খারাব উদ্দেশ্যে সফর করা, যার অনুমতি ইসলামী শরীয়ত প্রদান করেনি। যেমন-কোন পীর, বুজুর্গ বা ওলীর মাজার ও কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা। অথবা হারাম বা নিষিদ্ধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা। যেমন-মদ বা নেশা জাতীয় কোন বস্তু ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সফর করা। এ ছাড়াও যে কোন অসৎ কাজ, অশ্লীল বিনোদন ও ফাসাদ সৃষ্টি করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা।
তিন. বৈধ সফর :
দুনিয়াবী কোন বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা। যেমন-বৈধ কোন ব্যবসা বাণিজ্য, হালাল ও রুচিশীল বিনোদন ইত্যাদি। এ ধরনের সফর কখনো কখনো প্রশংসনীয় সফরের অন্তর্ভূক্ত হয়। যখন এর সাথে ভাল নিয়্যত এবং শরীয়ত সম্মত কোন উদ্দেশ্য জড়িত থাকে এতে সাওয়াবও লাভ হয়। যেমন-টাকা উর্পাজনের উদ্দেশ্য নিজেকে কারো মুখাপেক্ষী না করা, মানুষের নিকট হাত পাতা হতে বিরত থাকা এবং ছেলে-মেয়েদের জন্য হলাল খাদ্যের জোগাড় করা- ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী। (সূরা আলে ইমরান-১৩৭/১৩৮) অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন :- তাহলে আপনি বলে দিন, চেয়ে দেখ তো আসমানসমুহে ও যমীনে কি রয়েছে। আর কোন নিদর্শন এবং কোন ভীতিপ্রর্দশনই কোন কাজে আসে না সেসব লোকের জন্য যারা মান্য করে না। (সূরা ইউনুস-১০১) বিশ্বময় জাল বিস্তার করে আছে স্রষ্টার অপূর্ব লীলা রহস্য। মহান স্রষ্টার এই সুন্দর প্রকৃতি মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
এন এইচ, ২০ অক্টোবর