চট্টগ্রাম

ব্যবস্থা থাকা সত্বেও আইসিইউর অভাবে ছটফট করে মারা গেলেন খালেদা

চট্টগ্রাম, ২৭ জুন- চট্টগ্রাম মেডিকেলে আইসিইউ ১০টি শয্যার বিপরীতে পাঁচটি এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চারটি আইসিইউ শয্যা খালি থাকার পরও খালেদাকে নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ১০টি শয্যার বিপরীতে পাঁচটি শয্যা খালি থাকা সত্ত্বেও আইসিইউ পাননি করোনা আক্রান্ত পোশাককর্মী খালেদা (৩৫)। আইসিইউর অভাবে সাধারণ শয্যায় চার দিন ছটফট করে আজ রোববার মারা গেলেন তিনি।

খালেদার মা সৈয়দা বেগম বলেন, ‘আমাদের মতো গরিবদের জন্য কেউ নেই। আমার মেয়ে আইসিইউর অভাবে মারা গেছে।’

বিনা চিকিৎসায় মেয়ের এমন মৃত্যুতে অসহায়ের মতো কাঁদতে কাঁদতে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজছিল। সৈয়দা বলেন, ‘মেয়ের দাফন গ্রামের বাড়িতে তার বাবার কবরের পাশে হবে।’

রোববার (২৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে তিনি মারা যান। খালেদার গ্রামের বাড়ি মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নে। তাঁরা ছয় বোন, দুই ভাই। তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। অন্য নারী পোশাককর্মীদের সঙ্গে চান্দগাঁও বরিশাল বাজার এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। খালেদার বাবা বেঁচে নেই। স্বামীর অত্যাচারে ২০১৩ সালে খালেদার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর চট্টগ্রাম শহরে এসে পোশাক কারখানায় চাকরি করে নিজে চলতেন, মায়েরও খরচ দিতেন। খালেদার সাত বছরের একটি মেয়ে আছে।

রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় খালেদাকে গত সোমবার (২১ জুন) নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন (মঙ্গলবার) রাত ৮টার দিকে তাকে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চমেকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তার আইসিউ বেড প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকরা। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে চমেক হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই বলে বাইরে চেষ্টা করতে বলেন। এরইমধ্যে শুক্রবার বিকেলে করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এলে তাকে আবার চমেকের করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার সময় রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খালেদার যখন আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল, তখন চমেকের আইসিইউ ১০টি শয্যার বিপরীতে খালি ছিল পাঁচটি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও খালি ছিল চারটি আইসিইউ শয্যা।

খালেদার চিকিৎসার তদারকিতে থাকা স্বজন মো. জালাল বলেন, ‘আমরা চমেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকার সময় দুইবার আইসিইউ বেডের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা বেড খালি নেই বলে অন্যদিকে চেষ্টা করতে বলেন। আমরা গরিব হওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডে ভর্তি করতে পারিনি। এরমধ্যে শুক্রবার তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আবার মৌখিকভাবে আইসিইউ বেডের জন্য আবেদন করি। এবার অক্সিজেন লেভেল ভালো আছে জানিয়ে আইসিইউ বেড দেয়া যাবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ আজ ভোরে তিনি মারা যান।’

তিনি বলেন, ‘মূলত আইসিইউ বেড না, টাকার অভাবে আমার রোগী মারা গেছে। কারণ টাকা থাকলে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেডে ভর্তি করাতে পারলে আমার রোগী বাঁচার সম্ভাবনা ছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, আমার কাছে আইসিইউ বেডের জন্য কেউ আবেদন করেননি। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের বিষয়টি আমি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করি। আমার হাসপাতালে এখনও চারটি আইসিইউ বেড খালি আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক খালি থাকা সাপেক্ষে আমরা সবাইকে আইসিইউ বেড প্রদান করি। রোগীর স্বজনকে আমার কাছে আসতে বলেন। তাদের আইসিইউ বেড পাওয়ার ক্ষেত্রে কারো গাফিলতি আছে কি-না আমি দেখছি।

তথ্যসূত্র: নতুন সময়
এস সি/২৭ জুন

Back to top button