দেশে তৃতীয় ওয়েভকে রুখতে পারবে না টিকাকরণের সর্বোচ্চ রেকর্ডও, মত বিশেষজ্ঞদের
নয়াদিল্লি, ২৭ জুন – টিকাকরণের নতুন নীতি বাস্তবায়ন হওয়ার পর এই সপ্তাহের প্রথমে যখন দেশে একদিনে ৮০ লক্ষের বেশি টিকাকরণ করানো হয়, তা দেখার পর কেন্দ্র সরকার বেশ উচ্ছসিত হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা টিকাকরণের এই অভূতপূর্ব গতি মারাত্মক দ্বিতীয় করোনা ওয়েভের থেকে তৃতীয় করোনা ওয়েভের দিকে চলা প্রবাহকে নাও আটকাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বরং প্রশ্ন তুলছেন যে অতীতের অধিকাংশ মাসে যেখানে টিকাকরণ ৩০ লক্ষের আশেপাশে ছিল সেটা এই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৪৬ লক্ষ টিকাকরণ হতে পারে কি?
৪ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে এপ্রিলে সমস্ত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে এবং একটি বিশাল ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী শিল্প থেকে উপকৃত হওয়া সত্ত্বেও ভারত তার জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশকে টিকাকরণ করাতে সফল হয়েছে, যা পশ্চিম দেশ ও চিনের চেয়ে অনেকটাই পেছনে। এইসব দেশে প্রতিদিন ২ কোটি করে টিকাকরণ হচ্ছে। ভারতের এই টিকাকরণের হার দেখার পর অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন যে একমাসের মধ্যে হয়ত দেশে আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় করোনা ওয়েভ, যা দেশকে অক্সিজেনের ঘাটতি ও হাসপাতালে করোনা রোগীর উপচে পড়া ভিড়ের মতো সাম্প্রতিকতম দুঃস্বপ্নকে ফের ফিরিয়ে আনতে পারে।
ভ্যাকসিন সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও বায়োলজির অধ্যাপক গৌতম মেনন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মনে হয় না টিকাকরণের সাম্প্রতিক গতি বজায় রাখা যাবে, আমরা জানি আমাদের সরবরাহের পরিস্থিতি কেমন।’ এই মহামারি প্রকোপ নিয়ে কাজ করা অধ্যাপক বলেন, ‘একদিনে টিকাকরণের তীব্র বৃদ্ধি কিছু রাজ্যের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল, যারা এই উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন ডোজ মজুত করে রেখেছিল। ভবিষ্যতে তৃতীয় ওয়েভের প্রভাবকে হাল্কা করতে আমাদের প্রতিদিন এক কোটি করে টিকাকরণ করানোর প্রয়োজন রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিনের নয়া নীতির প্রথমদিনই কিছু কিছু রাজ্যে ‘ম্যাজিক সোমবার’ (রেকর্ড টিকাকরণ) দেখা দিয়েছিল, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
দেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন ভারতে টিকাকরণ কর্মসূচিকে তরান্বিত করতে দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে। ২টি স্থানীয় ভ্যাকসিন নির্মাতারা ১০ কোটিরও কম ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে প্রত্যেক মাসে, যা নিয়ে লড়াই চলছে প্রায় ১৪.০ কোটি মানুষের মধ্যে। এছাড়াও দেশের গ্রামাঞ্চলে যেখানে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভারতীয় বাস করেন সেখানে টিকাকরণ নিয়ে দ্বিধা ও যৌক্তিক কঠিনতা রয়েছে, যা এখনও সমাধান হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশা করছেন যে টিকাকরণের অস্বাভাবিক রেকর্ড হারের প্রয়োজন রয়েছে।
দৈনিক এক কোটি টিকাকরণের লক্ষ্য এই সপ্তাহে দেশের টিকাকরণের ন্যাশনাল টেকনিকাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপের প্রধান এন কে অরোরা জানিয়েছেন যে আগামী মাসের মধ্যেই দেশে ২.২ কোটির বেশি শট উপলব্ধ হবে। তিনি এও জানিয়েছেন যে ভারতের লক্ষ্য দৈনিক এক কোটি করে টিকাকরণ করানো। তিনি এর সঙ্গে এও জানান যে শিশুদের বিপুল সংখ্যায় পোলিও টিকা দেওয়ার আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের। শুক্রবারই অরোরা জানিয়েছেন যে ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ অগাস্টে সংগ্রহ করার প্রত্যাশা রয়েছে ভারতের।
‘ম্যাজিক সোমবার’ নিয়ে সমালোচনা–নিন্দা তবুও কিছু বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ‘ম্যাজিক সোমবার’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনায় সরব হয়েছেন। দিল্লির মহামারিবিদ ও ইন্ডিয়া’স ব্যাটেল এগেইনস্ট কোভিডের সহ-লেখক চন্দ্রকান্ত লহেরিয়া জানিয়েছেন যে রেকর্ডে পোঁছানোর জন্য এই অতিমাত্রায় প্রচেষ্টা দেশের ভ্যাকসিনের সীমিত মজুতকে শেষ করে দিয়েছে। কোচির রাজাগিরি কলেজ অফ সোশ্যাল সায়েন্সের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অর্থনীতিবিদ রিজো এম জন টুইটে বলেছেন, ‘বুক ধড়ফড়ানি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ। কারণ ভারতের কাছে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন ডোজ নেই যে ফের ওই একই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে দৈনিক যদি ৩২ লক্ষ টিকাকরণ বজায় রাখা যায় তবে ভারতে বছরের শেষে ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ করা সম্ভব হবে এবং বাকি ৬০ শতাংশের টিকাকরণ ২০২২ সালের মার্চে গিয়ে সম্পন্ন হবে। তাঁরা এও জানিয়েছেন যে যদি বেশি করে ভ্যাকসিন উপলব্ধ হয় এবং ৩০ শতাংশ টিকাকরণ যদি বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাহলে দেশের ৫৫ শতাংশের সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া হয়ে যাবে ২০২১ সালের শেষেই।
সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া
এম ইউ/২৭ জুন ২০২১