নোয়াখালী

পারিবারিক কলহে সৎমাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা

নোয়াখালী, ২০ অক্টোবর- সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ ও পারিবারিক কলহের জের ধরে নোয়াখালী সদর উপজেলায় সৎমাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এক যুবক। নিহত নারীর নাম আছমা বেগম (৩২)। এ ঘটনায় হামলাকারী সৎছেলেসহ চারজন দগ্ধ হয়েছে।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের রামহরিতালুক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ হয়ে আহতরা বলে- হামলাকারী সৎছেলে কামাল উদ্দিন ও তার স্বজন সুমন, মান্না, তারেক। তাদের উদ্ধার করে দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় কামাল উদ্দিন ও তারেককে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সুমন ও মান্নাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শামীম হোসেন নামে এক যুবককে আটক করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের রামহরিতালুক গ্রামের সৌদি প্রবাসী ইসমাইল হোসেন বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আছমা বেগম দুই সন্তান রায়হান (৮) ও পুতুলকে (৩) নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন। বাবুলের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে কামাল উদ্দিন মাইজদী শহরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করে ও সেখানে বসবাস করে। বাবুলের সম্পত্তি ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে আছমা বেগমের সঙ্গে কামাল উদ্দিনের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবুলের স্বজন মান্না ও সুমন জানায়, সোমবার সকাল ১০টার দিকে আছমা বেগম বসতবাড়ির নিজ কক্ষে কাজ করছিলেন। কামাল উদ্দিন মাইজদী শহর থেকে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে ১৪-১৫ জন যুবক নিয়ে হঠাৎ তার কক্ষে প্রবেশ করে। এ সময় কামাল উদ্দিন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে প্লাস্টিকের বোতলভর্তি পেট্রোল আছমার কক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আছমা দগ্ধ হন। এ সময় কামাল উদ্দিন ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় নিজেও দগ্ধ হয়। এ আগুন দেখে সুমন, মান্না ও তারেক আগুন নেভাতে ও আছমা-কামাল উদ্দিনকে উদ্ধার করতে এসে তারাও দগ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আছমাকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। আছমার স্বজন শুভ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: মা খুন বাবা কারাগারে, অনিশ্চিত তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে, তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আছমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে আছমা তাকে ও তার দুই ভাইকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। তাদের ঠিকমতো ঘরে থাকতে ও খাবার দিতেন না। এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে সে সকালে স্থানীয় খলিফার হাট বাজার এলাকা থেকে এক বোতল পেট্রোল কিনে এ হামলা চালায়। অগ্নিদগ্ধ আছমার বাবা আবুল কাশেম বলেন, তার মেয়ের সুখ সহ্য করতে না পেরে সৎছেলে কামাল হামলা চালিয়েছে। তিনি তার মেয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, অগ্নিদগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আছমা বেগমের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়।

সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) টমাস বড়ূয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ও পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামলাকারী কামাল উদ্দিনের শ্যালক শামীম হোসেন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

সূত্র : সমকাল
এম এন / ২০ অক্টোবর

Back to top button