অপরাধ

আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে মিশে ‘শিশু পর্নোগ্রাফি বানানো’ বোরহান

হৃদয় আলম

ঢাকা, ২০ অক্টোবর- আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মিশে ‘শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়ায়’ ঢাকার তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন বোরহান উদ্দিন (২৬)। তিনি রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠী বলেন, ‘বোরহান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল। আমরা যখন ৫১ তম ব্যাচে ছিলাম (২০১৩-১৭) তখন বোরহান বেশিরভাগ সময়ই ক্লাসে চুপচাপ এবং শান্ত থাকতো। অন্যরা যখন নানান বিষয় নিয়ে মজা, আলোচনা বা আড্ডা দিতো বোরহান তখন অন্যমনস্ক থাকতো।’

‘এছাড়া ক্লাস শেষ হওয়ার পর পরই সে বেরিয়ে যেত। অন্যরা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আড্ডা দিলেও বোরহান ততোটা সক্রিয় থাকতো না, এমকি সে ফোনেও খুব বেশি কথা বলতো না।’

তার বন্ধুর মতে, কোনো ধরনের হতাশা থেকে বোরহান এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের গ্রাজুয়েশন শেষে আমরা যখন অনেকে চাকরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলাম- বোরহান তখন বেকার ছিলো। হয়তো হতাশা থেকেও সে এ ধরনের কাজে জড়াতে পারে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুই ব্যক্তির অভিযোগের পর দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। বোরহান ছাড়া গ্রেপ্তার বাকি দু’জন হলো মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ (২৫) ও মো. অভি হোসেন।

সিটিটিসির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, রাজধানীর শাহজাহানপুর, পল্লবী ও রামপুরা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ হুইলচেয়ারে বসেই, অবশেষে গ্রেফতার সন্ত্রাসী মীরু

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এই তিন যুবক ঢাকার প্রথম সারির তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনজনই শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরির কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন তারা কারাগারে আছেন। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও কম্পিউটার ছাড়াও ৩০ জিবি ভলিউমের ৩ হাজার ৩১৬টি ফাইল জব্দ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৪৫ জন ‘ভিকটিমের’ নগ্ন ছবি রয়েছে।

এরা সাধারণত ৯ থেকে ১৫ বছরের ছেলে-মেয়েদের ‘টার্গেট’ করতেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ইশতিয়াক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে তারা দেশের বাইরের শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজ করে। তারা নামকরা স্কুলের শিশু-কিশোর-কিশোরীর অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করত এবং নানাভাবে অসামাজিক কাজে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নুড কনটেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দিত। নিবন্ধিত সদস্য হিসাবে তারা অশ্লীল ডার্ক ওয়েবসাইটে ঢুকত।’

এই চক্র কখনও কখনও অবস্থাসম্পন্ন শিশুর অভিভাবকের কাছে কনটেন্ট পাঠিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন বলে জানান তিনি।

সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক বলেন, এছাড়া তারা কখনও কখনও সমকামী হিসাবেও অনলাইনে নিজেদের পরিচয় দিতেন। গ্রেপ্তারের পর একদিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পরদিন রোববার আদালতে পাঠালে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এন / ২০ অক্টোবর

Back to top button