দেশবাসীকে করোনা থেকে বাঁচাতে পাহাড়-জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছেন ভুটানের রাজা
থিম্পু, ২৫ জুন – নাগরিকদের কাছে গিয়ে তাদেরকে করোনা মোকাবেলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মেনে চলতে সাপ আর জোঁকে পরিপূর্ণ একের পর এক জঙ্গল ও মাইলের পর মাইল পাহাড়ি পথ অতিক্রম করছেন ভুটানের রাজা।
মাথায় বেসবল ক্যাপ, পরনে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, সঙ্গে পিঠে ঝোলানোর ব্যাগ এভাবেই বিভিন্ন প্রান্তে দেশটির রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুক। কেবল তা-ই নয়, প্রত্যেকটি এলাকা থেকে ফিরে নিয়ম মেনে রাজধানীর একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনেও থাকছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পার্শবর্তী দেশ ভারতের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে ৭ লাখের মতো জনসংখ্যার দেশটিকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণে গত ১৪ মাস ধরে ভুটানের রাজা এভাবেই পায়ে হেঁটে, গাড়িতে কিংবা কোথাও কোথাও ঘোড়ায় চেপে দেশের এমাথা-ওমাথা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।
৪১ বছর বয়সী রাজার এ পরিশ্রম যে বৃথা যায়নি, সেখানকার পরিস্থিতিই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত চীন আর ভারতের মাঝে থাকা হিমালয়ের দেশটিতে করোনাভাইরাস তেমন সুবিধা করতে পারেনি, মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজনের।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন “জনগণকে মহামারী নিয়ে সতর্ক করতে রাজা যখন মাইলের পর মাইল সফর করছেন, দরজায় কড়া নাড়ছেন, তখন মানুষও তার কথা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। জনগণের জন্য নির্দেশনা জারি করার তুলনায় তার উপস্থিতি বেশ শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে”।
মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে তারা একা নয়, রাজার উপস্থিতি তাদেরকে আশ্বস্ত করছে, বলেছেন তিনি।
লোটে শেরিং নিজেও চিকিৎসক। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা রাজার সঙ্গী হিসেবে তিনিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গেছেন।
রয়টার্স আরও জানায়, রাজা নিজের সর্বময় ক্ষমতা কমিয়ে ভুটানে ২০০৮ সাল থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চালু করলেও দেশটির সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো রাজ পরিবারের প্রতি আনুগত্যের প্রভাব প্রবল।
দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া কর্মীদের ধন্যবাদ দিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতেও ভুটানের রাজা ৫ দিন পাহাড়ি পথে হেঁটেছেন।
রাজার সাক্ষাৎকার নিতে রয়টার্সের অনুরোধ তার কার্যালয় প্রত্যাখ্যান করেছে; অবশ্য তার ইনস্টাগ্রাম ও ফেইসবুক পেইজেই মহামারীর মধ্যে তার কর্মকাণ্ড ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সফরের সচিত্র বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে।
ভুটানের রাজপ্রাসাদের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছের, মহামারী দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে আমাদের জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, আর এটাই আমাদের রাজার সবচেয়ে বড় ভয়।
বিভিন্ন এলাকা সফর শেষে দুই ছেলের জনক জিগমে ওয়াংচুক রাজধানী থিম্পুর একটি হোটেলে উঠেন, মেনে চলেন কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা। ভুটানের বেশিরভাগ নাগরিকের মতো তিনিও করোনাভাইরাসের টিকার মাত্র একটি ডোজই নিয়েছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং জানিয়েছেন, যারা টিকা পাওয়ার উপযুক্ত, তাদের ৯০ শতাংশের দেহে এরই মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৫ জুন ২০২১
