ঢাবিতে প্রায় ৮৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
ঢাকা, ২৪ জুন – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার গতবারের তুলনায় কমলেও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এই বাজেট পাস হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার গতবারের তুলনায় প্রায় ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কম। মোট বাজেট বরাদ্দের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেবে ৬৯৬ কোটি ৫৪ লাখ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে ঢাবির বাজেট ছিল ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এটি ছিল টাকার অঙ্কে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। এর আগের অর্থবছরে তা ছিল ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগ অংশই ব্যয় হবে বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে। এ খাতে ব্যয় হবে ৬১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৭৩.৫৭ ভাগ। এ ছাড় পণ্য ও সেবা বাবদ ১৬৮ কোটি ৮ লাখ, মূলধন খাতে ২১ কোটি ৬৯ লাখ এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ১৯ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
মোট বাজেটের আকার কমলেও বেড়েছে গবেষণা খাতের মঞ্জুরি। গত অর্থবছরে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও এ বছরের বরাদ্দ ১১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১.৩২ ভাগ। এ ছাড়া বাজেটে শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা ১০ কোটি ২০ লাখ, রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনার জন্য আড়াই কোটি টাকা, গবেষণাগার সরঞ্জামাদি বাবদ ছয় কোটি ৫ লাখ, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের চিন্তা : সভার শুরুতে সিনেট অভিভাষণ প্রদান করেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, মৌলিক গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতের উন্নয়ন না ঘটলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থানের উন্নতি হবে না। বরং পেছানোও অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাস্তবতা বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে নির্ধারিত বলেও দাবি করা যাচ্ছে না। শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ও গুণগত মানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। তাই বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলোর সক্ষমতা এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাহিদা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিল নির্দেশনা দিয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দরিদ্রদের করের টাকায় ধনী পরিবারের সন্তানদের প্রায় বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করা অযৌক্তিক। ‘অ্যাবিলিট টু পে’ (পরিশোধের সক্ষমতা) নীতির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সব ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে। সমাজের বিত্তবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার যুক্তিসংগত ব্যয় বহন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই কমবে।
অধিবেশনের বাইরে বিক্ষোভ : সিনেট অধিবেশন চলাকালে চাকরিকাল ৬৫ বছর করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো তাদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ করা হোক। এই দাবিতে সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন তারা। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
সূত্র : সমকাল
এম এউ, ২৪ জুন