জাতীয়

হাসপাতালগুলোতে ‌‌‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের’ বিপজ্জনক প্রভাব

ঢাকা, ২৪ জুন – রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে কোভিড-নাইন্টিনের সবচেয়ে সংক্রমণশীল ধরন ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহেই ঢাকা মেডিকেলের কোভিড ইউনিটে আর রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হবে না। অন্য হাসপাতালগুলোতেও একই অবস্থা।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর চাপ। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, রাজধানীতে করোনা রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও শয্যা অনুপাতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তা মোকাবিলায় বেগ পেতে হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ৩৬ থেকে ৪০ জন করে রোগী যদি ভর্তি হয় আট থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতাল ভরে যাবে। তখন আমরা আর হাসপাতালে জায়গা দিতে পারব না। এই যে আমরা সামনে একটা পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি সেটা ভয়াবহ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ২৭৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে একটিও খালি নেই। বরং শয্যার বাইরে আরও তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০টি আইসিইউর কোনোটিই খালি নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ৩৪৬টি। আর ২০টি আইসিইউ শয্যার কোনোটি খালি নেই। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২৬৩টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ২৪টি আইসিইউ শয্যার একটি মাত্র খালি রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৭৩টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই।

করোনাভাইরাস পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত নিজের রূপ বদলায়। এরই ধরাবাহিকতায় কোভিড ১৯ যুক্তরাজ্যে আলফা, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিটা, ব্রাজিলে গামা আর ভারতে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে রূপান্তরিত হয়েছে। আর এদেশে সীমান্ত এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়ে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এখন দখল নিচ্ছে গোটা দেশ। এর প্রভাবে রাজশাহী, খুলনার পরে এবার এগিয়েছে রাজধানীর দিকে। দুই সপ্তাহে আগেই যেখানে ঢাকা মেডিকেলে ১০ থেকে ২০ জন কোভিড রোগী আসতো। চলতি স‌প্তাহে সেই সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫শে দাঁড়িয়েছে। চাপ বাড়ছে রাজধানীর অন্যান্য কোভিড হাসপাতালেও। এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে লকডাউন হয়েছে বেশ কিছু এলাকা।

ঢাকায় সংক্রমণ রোধে বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার সব যান। সংক্রমণের চেইন ভেঙে ফেলতে এ লকডাউনই উত্তম পথ বলে মনে করছে আইইডিসিআর। সংক্রমণ রোধে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পাশাপাশি আইইডিসিআর হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এসএম আলমগীর বলেন, যত বেশি ট্রান্সমিশনে ভাইরাস থাকবে ততবেশি রূপ বদলাবে। লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ট্রান্সমিশন সাইকেলটাকে ভাঙা। এটার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গাতে। আর এটা অন্যতম পন্থা।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনের পাশাপাশি টেস্ট ও আইসোলেশন বাড়াতে হবে। টিকা দান কর্মসূচিকে আরও গতিশীল হতে হবে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অনেক রোগী হবে যা ঠেকানোর মত অবস্থা আমাদের হাসপাতালে নেই।

রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে দেশের করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৪ জুন ২০২১

Back to top button