বরগুনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি
বরগুনা, ২৪ জুন- সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্র্বাচনে বরগুনা সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ছয়টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। মাত্র তিনটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়নে উপেক্ষা, তৃণমূলে সাংগঠনিক তৎপরতার ঘাটতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণেই ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ২১ জুন ভোটগ্রহণ হয়। ফলাফলে নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা পরাজিত হন।
বরগুনা সদরের ঢলুয়া, ফুলঝুড়ি ও বরগুনা সদর ইউনিয়ন এ তিনটিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এছাড়া সদরের বদরখালী, গৌরীচন্না, আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িরচর, কেওড়াবুনিয়া ও নলটোনা এ ছয়টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে নলটোনা ও বদরখালী ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন তারা।
নলটোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম জাকির বলেন, ইউনিয়নের জনপ্রিয় প্রার্থীদের উপেক্ষা করে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমাদের (নলটোনা) ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির এবারও জনপ্রিয় ছিলেন, তাকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই এখানে নৌকার পরাজয় হয়েছে।
কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন হারুন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে মনিরুজ্জামান নসা এবার জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় মোশাররফ ভাইকে আর এ কারণে নৌকা হেরেছে। আমি মনে করি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একই অবস্থা অন্যসব ইউনিয়নেও। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে উপজেলা ও জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিত, স্বজনপ্রীতি ও গ্রুপিংয়ের অভিযোগ এনেছেন। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বরগুনা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, সাংসদ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা যে যার পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ পাঠান। এতে তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য হয়। এটাই নির্র্বাচনে হেরে যাওয়ার বড় কারণ।
এ ব্যাপারে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ ওলি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি মনেপ্রাণে চায় তাহলে বরগুনাতে আওয়ামী লীগকে হারানোর কেউ নেই। কিন্তু মেনে না নেওয়ার মতো বাস্তবতা হলো আমাদের অনেক প্রার্থী হেরেছেন। আমরা তৃণমূলের মতামতেই প্রার্থী যাচাই-বাছাই করেছি। এখানে আমাদের কোনো হাত ছিল না। শুধু আমরা বিগত নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে যারা কাজ করেছেন, “বিদ্রোহী” হয়েছেন এমন প্রার্থীদের বাদ দিয়ে প্রার্থী বাছাই করে সুপারিশ পাঠিয়েছি। তবে হেরে যাওয়ার পর আমার মনে হয় আমাদের এখন
তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো উচিত। আমরা সে কাজটি দ্রুত শুরু করব।’
তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
এস সি/২৪ জুন