উত্তর আমেরিকা

এশিয়ায় কমছে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য

ওয়াশিংটন, ২৪ জুন- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে আনেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগে তিনি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি চূড়ান্তও করে যান। এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় বসে চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া বিষয়টির সুরাহা করেন সময়সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাবাহিনী বের হয়ে যাবে। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জয় পায়নি। এখনো দেশটিতে তালেবানরা রয়েছে এবং এই গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে নিরাপদে আফগানিস্তান ছাড়তে হচ্ছে।

আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তো সম্প্রতি স্থানীয় এক মিডিয়াকে বলেই বসেছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কারজাইও হেরে গেছেন আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে। কারণ, হামিদ কারজাই হচ্ছেন কাবুলের ওয়াশিংটন মদদপুষ্ট প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র আফগান মঞ্চ ছাড়লে কারজাইয়ের অবস্থাও যে ভালো হবে না তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যেই তালেবান যোদ্ধারা আফগান বাহিনীর ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা শুরু করেছে। গত সোমবারও তালেবান হামলায় ২৯ জন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হয়েছে দেশটিতে।

আফগানিস্তান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা রাখতে চাইছে দেশটিতে। এ জন্য তার জন্য নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির নতুন খেলোয়াড় তুরস্ককে ফ্রন্টলাইনে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের হাতে ছাড়তে চাইছে। তুরস্কও এক বাক্যে এই কাজের জন্য রাজি, কারণ অনেক দিন ধরেই দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের খায়েশ ছিল এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা। আফগানিস্তানের হাত ধরে সেই খায়েশ পূরণ হতে চলছে তার।

এদিকে বাইডেন যখন তুরস্ককে কাবুলে পাকাপোক্ত করতে চাইছেন, তখন ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান বেঁকে বসেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি আর পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হতে দেবেন না। ইমরান খান অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তালেবানরা প্রতিশোধ নিতে চাইবে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানে যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি থাকে, তাহলে সেই ঘাঁটি তালেবান আক্রমণের শিকার হতে পারে। এমন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না ইমরান খান। মিডিয়াকে ইমরান খান সরাসরি বলেন, ‘আমরা এমন ঝুঁকি নিতে পারি না। ইতিমধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়ে অনেক মূল্য দিয়েছি।’

পাকিস্তানও যদি যুক্তরাষ্ট্রকে জায়গা না দেয়, তাহলে এশিয়ায় শুধু দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘাঁটি রাখতে পারছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি আছে। নিরাপত্তা দেওয়ার খরচ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রশাসন আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে।

ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন দীর্ঘদিনের শত্রু উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে। দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ চান এখনো উভয় দেশের রাজনীতিতে এমন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। কোনোভাবে যদি দুই কোরিয়া একত্রিত হয়ে যায়, তাহলে কোরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটির আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’র গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তার সবচেয়ে কাছের মিত্রকেও হারিয়েছে। এমন অবস্থায় এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
এস সি/২৪ জুন

Back to top button