যূক্তরাষ্ট্র

প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে পারেন বাংলাদেশি শাহানা

মনজুরুল হক

নিউইয়র্ক, ২৩ জুন – যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি-আমেরিকানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাঁর নাম শাহানা হানিফ।

স্থানীয় সময় ২২ জুন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে দলীয় প্রাইমারি হয়। ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে শাহানা হানিফ ব্রুকলিনের কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯-এর সরাসরি ভোটে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। দলীয় প্রাইমারিতে তাঁর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।

ডেমোক্র্যাট–বহুল নিউইয়র্ক নগরীর সিটি কাউন্সিলে যাঁরা দলীয় প্রাইমারিতে জয়ী হবেন, তাঁরাই ২ নভেম্বরের মূল নির্বাচনে বিজয়ী হবেন বলে নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়।

২২ জুন অনুষ্ঠিত ‘র‌্যাঙ্ক চয়েস’ ভোটের ফলাফল ২৯ জুন নিউইয়র্কের নির্বাচন অফিস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আগাম ভোট ও ডাক ভোট যোগ হয়ে দলীয় প্রাইমারির মূল ফলে পরিবর্তন আসতে পারে।

নগরীতে প্রথম ‘র‍্যাঙ্ক চয়েস’ পদ্ধতিতে ভোট হয়। এ পদ্ধতিতে একজন ভোটার পছন্দের ক্রমানুসারে পাঁচজনকে ভোট দিতে পারেন। সিটির চূড়ান্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ২ নভেম্বর।

নগরীর কুইন্স থেকে সিভিল বিচারক পদে নির্বাচন করা প্রার্থী সোমা সাঈদ অল্প ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। চূড়ান্ত ফলাফলে তিনি নির্বাচিত হলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নিউইয়র্কের সিভিল বিচারক হিসেবে ১০ বছরের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন।

শাহানা হানিফ ও সোমা সাঈদ ছাড়া এক ডজনের বেশি বাংলাদেশি অন্যান্য প্রার্থী নির্বাচনে ভালো করতে পারেননি বলে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে।

নগরীর মেয়র পদে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এরিক অ্যাডামস পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর পেছনে রয়েছেন মায়া উইলি ও ক্যাথরিন গার্সিয়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু ইয়াং চতুর্থ অবস্থানে থেকে নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে নিয়েছেন।

নগরীতে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারি নিয়ে তেমন কোনো উত্তেজনা ছিল না। গতকাল মঙ্গলাবার রাতের ফলাফলে জানা যায়, রিপাবলিকান দলের প্রার্থী কার্টিস স্লিউয়া তাঁর প্রতিপক্ষ ফারনান্ডো ম্যাটিওর চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছেন।

আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান কার্টিসের ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কে হচ্ছেন, তা জানার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে ভোটপ্রাপ্তির হার দেখে প্রতীয়মান হয়, এরিক অ্যাডামসই হচ্ছেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। আর তিনি জয়ী হলে নিউইয়র্কের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র হিসেবে তিনি রেকর্ড গড়বেন।

শাহানা হানিফ আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে বাংলাদেশি অভিবাসীবহুল নিউইয়র্কে নতুন ইতিহাসের সূচনা করতে পারেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসন চলমান। কিন্তু এখানে এখনো কোনো বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করে কোথাও নিজেদের কোনো ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেননি বাংলাদেশিরা।

শাহানা হানিফ অনেক দিন ধরে ব্রুকলিনে রাজনীতিতে সক্রিয়। মাঠের রাজনীতিতে তিনি প্রগতিশীল যুব প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত।

ব্রুকলিনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা শাহানা হানিফের সমর্থনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন। গতকাল রাতে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শাহানা হানিফ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। জনগণের অধিকারের ভবিষ্যৎ লড়াইয়ে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ।

নির্বাচনে সিটির ৫ বরোর মধ্যে ৩ বরো থেকে ১৩ বাংলাদেশি-আমেরিকান বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নিউইয়র্ক সিটির বোর্ড অব ইলেকশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ডেমোক্রেটিক–দলীয় প্রাইমারি নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ প্রার্থীসহ মোট ৫২৯ জন বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আগাম ভোট, মেইল ভোট ও ভোটের দিন ভোট—এই তিন পদ্ধতিতে ভোটদানের নিয়ম। ১২ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত আগাম ভোট গ্রহণ চলে।

নিউইয়র্ক সিটির ৫ বরোর ৫১টি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের মধ্যে বাংলাদেশি প্রার্থী হিসেবে ব্রঙ্কস বরোর কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-১৮ থেকে মোহাম্মদ এন মজুমদার ও মির্জা মামুন রশীদ, কুইন্স বরোর কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে মৌমিতা আহমেদ, সাবুল উদ্দিন ও সাইফুর খান হারুন, কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৬ থেকে বদরুন খান ও সুলতান মারুফ, ব্রুকলিন বরোর কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩২ থেকে শেখ হেলাল, কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে মিসবা আবদীন, কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে শাহানা হানিফ ও মামনুন হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

কুইন্স কাউন্টি জজ পদে অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদে শাহানা মাসুম অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৬১ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এন এইচ, ২৩ জুন

Back to top button