ইসলাম

দুশ্চিন্তা দূর করার ১০ আমল

বিপদ-আপদ ও মানসিক অস্থিরতা মানবজীবনের নিত্যসঙ্গী। বিপদ-আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব হতে পারে, রহমতও হতে পারে। বিপদ আসার পর যদি গুনাহ বেড়ে যায়, আমল কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব। পক্ষান্তরে যদি বিপদ আসার পর আমল বেড়ে যায়, তাহলে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুশ্চিন্তা ও বিপদাপদে ইমানদারের ১০টি করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো

এক. ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। কেননা তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থাবান ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই …।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১০৭)

দুই. দুনিয়ার বিপদের তুলনায় পরকালের বিপদের কথা স্মরণ করুন। দুনিয়ার বিপদ-আপদ আপনার জন্য পরকালের বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার কারণ হতে পারে। আর পরকালের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ খুবই নগণ্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা নাজিআত, আয়াত : ৪৬)

তিন. চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিন। নিজের চেয়ে নিচের মানুষদের অবস্থার দিকে তাকান। ভাবুন, আল্লাহ আপনাকে তার থেকে ভালো রেখেছেন। মনোবিজ্ঞানীরাও ডিপ্রেশনের চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে এভাবে চিন্তা করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। মহানবী (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই চিকিৎসার এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, খাব্বাব (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলাম এ অবস্থায় যে তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে একজন মানুষকে ধরে আনা হতো, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হতো। অতঃপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই খ- করে দেওয়া হতো এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৬)

চার. আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তার ওপর ভরসা রাখুন। আশা রাখুন যে তিনি আপনাকে আপনার দুরবস্থা থেকে নাজাত দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯০১)

পাঁচ. ধৈর্য ধারণ করুন। বিশ্বাস করুন যে কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য আসে। কঠিন অবস্থার পর সচ্ছলতা আসে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

ছয়. সালাতুল হাজাত পড়ুন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, তখন তিনি নামাজে মগ্ন হতেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

সাত. বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। (ফলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ৭১)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

আট. অধিক হারে দরুদ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উবাই ইবন কাব (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার ওপর অধিক হারে দরুদ পাঠ করে থাকি। আমার সময়ের কতটুকু আপনার প্রতি দরুদ পাঠে ব্যয় করব? রাসুল (সা.) বলেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি আরও বাড়াও তবে ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বলেন, তোমার যা ইচ্ছা; তবে আরও বৃদ্ধি করলে তাও ভালো। আমি বললাম, দুই-তৃতীয়াংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা; তবে আরও বাড়ালে তাও ভালো। আমি বললাম, আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

নয়. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা গ্রহণ করুন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’

দশ. দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে নাজাতের উদ্দেশে হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ওই দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। রাসুল (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

আরও পড়ুন: নারীর সাজসজ্জা ও প্রসাধন বিষয়ে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা

চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুল (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)

আডি/ ১৯ অক্টোবর

Back to top button