সিলেট

সিলেটে-৩ আসনে চার প্রার্থীর হলফনামায় যা আছে

ঢাকা, ২১ জুন – চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত অবস্থায় সিলেট-৩ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

সিলেটে-৩ আসনে উপনির্বাচনে লড়তে গত ১৫ জুন ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

তাঁরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সকল প্রার্থীই হফলনামা পুরণ করে জমা দিয়েছেন। এতে তারা তাদের সম্পদ-ঋণ ও আয়-ব্যায়ের হিসাব এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যসহ ব্যক্তিগত বিষয়াদি বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

হলফনামা অনুযায়ী- এই চারজনের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের যৌথ (তিনি ও তার স্ত্রীর) মালিকানায় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। বর্তমানে হাবিব ও তার স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে আড়াই কোটি টাকারও বেশি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য বহিস্কৃত বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী সর্বোচ্চ ৪৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদের মালিক। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের সিলেট, হবিগঞ্জ ও ঢাকায় রয়েছে বাসাবাড়ি ও জমিজমা রয়েছে। বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়ার কোনো ব্যাংক ঋণ বা দেনা-পাওনা নেই।

হাবিবুর রহমান হাবিব :

হাবিবের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই, আগেও ছিল না। হলফনামায় তিনি পেশা দেখিয়েছেন ‘ব্যবসা’। তিনি নিজেকে প্রবাসী পল্লী গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে পেশা ব্যবসা দেখালেও এ খাত থেকে হাবিবুর রহমান কোনোও আয় উল্লেখ করেননি হলফনামায়।

স্নাতক পাস এই রাজনীতিবিদের কাছে নগদ টাকা আছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার। তার স্ত্রীর কাছে নগদ আছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩০ টাকা। সবমিলিয়ে তাদের কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার ৭৩৫।

ব্যাংকে হাবিবুর রহমানের ৫২ হাজার ২৪৪ টাকা ও তার স্ত্রীর ৯ হাজার ৪৪৮ টাকা জমা আছে। শেয়ারবাজারে আছে ৩৫০০ শেয়ার, যেগুলোর মূল্য ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।

কৃষিখাত থেকে কোনোও আয় নেই হাবিবুর রহমানের। তবে তার স্ত্রী এ খাত থেকে বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৫০ টাকা আয় করেন। হাবিবের নামে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকার অকৃষি জমি আছে; তবে জমির পরিমাণ তিনি উল্লেখ করেননি।

ঢাকার পূর্বাচলে ৭ কাঠা প্লটের মালিক হাবিব। এর মূল্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার কাছে কোনো স্বর্ণ নেই। এমনকি আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রীরও কোনো মূল্য দেখাননি তিনি। ব্যক্তিগত গাড়ি সম্পর্কিত তথ্যও নেই হলফনামায়।

হাবিবের ব্যক্তিগত কোনো ঋণ বা দেনা নেই। তবে প্রবাসী পল্লী গ্রুপের নামে ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ আছে।

আতিকুর রহমান আতিক :

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক বিএসসি পাশ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি ফৌজদারি মামলার (১১৮২/২০০১) আসামি ছিলেন। নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মামলাটি খারিজ হয়।

পেশায় ব্যবসায়ী আতিক প্রিন্স গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান এন্ড ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। প্রিন্স রিয়েল এস্টেট প্রা. লি., প্রিন্স মেডিকেল সেন্টার ও সিলেট সিটি মেডিকেল সেন্টার নামক ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।

আতিক ব্যবসা থেকে বার্ষিক ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও নির্ভরশীলরা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ২২ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নগদ রয়েছে। নিজের নামে ২০ লাখ ৭০ হাজার ১৬৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। নিজের নামে প্রিন্স রিয়েল এস্টেট (প্রাঃ) লিঃ এর ১৬ হাজার শেয়ার রয়েছে , যার মূল্য ১৬ লাখ টাকা , স্ত্রীর নামে একই প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার শেয়ার রয়েছে , যার মূল্য ২ লাখ টাকা , ছেলে ওয়ালিউর রহমানের নামে একই প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার শেয়ার রয়েছে , যার মূল্য ২ লাখ টাকা।

নিজের নামে ১০ লাখ টাকার জীপ গাড়ি রয়েছে। ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রাডো গাড়ি-যা তিনি এমডি হিসেবে ব্যবহার করেন, গাড়িটি কোম্পানির নামে। নিজের নামে ৭ লাখ টাকার ১০ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ২৫ ভরি স্বর্ণ , নিজের নামে ৯ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার ও স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং নিজের নামে ২ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। নিজের নামে সিলেট মেডিকেল সেন্টারের আড়াই লাখ টাকার শেয়ার ও প্রিন্স মেডিকেল সেন্টারের ৩০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে।

স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে- নিজের নামে দক্ষিণ সুরমার হরগৌরী মৌজায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার ১৫ শতক জমি, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ধানী জমি। স্ত্রীর নামে ঢাকার সাতারকুল মৌজায় (নিকুঞ্জ) ১০ কাঠা জমি , যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা , যৌথ মালিকানায় মোগলাবাজারের জাহানপুরে ৪০ লাখ টাকার ৮ বিঘা জমি রয়েছে।

নিজের নামে ঢাকার নিকুঞ্জ-২ জোয়ার সাহারা মৌজায় রাজউক থেকে প্রাপ্ত ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার , রামপুরা উলন মৌজায় ৮০ হাজার টাকার ৪ কাঠা , হবিগঞ্জের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার সাড়ে ৫ শতক এবং ৪৫ হাজার টাকার ৩৬ শতক জমি , হবিগঞ্জের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় ৩৫ লাখ টাকার বাড়ি , ঢাকার (বারিধারা নর্থ) কালাচাঁদপুরে সাড়ে ৯ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ও বারিধারা ৬৬ পার্ক রোডে ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২৫ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটের অর্ধেক মালিকানা রয়েছে। স্ত্রীর নামে গুলশান-২ (রোড-৩৫) এ ২৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ফ্ল্যাট , বারিধারা ৬৬ পার্ক রোডে ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২৫ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটে অর্ধেক মালিকানা রয়েছে।

ছেলে ওয়ালিউর রহমানের নামে রয়েছে ঢাকার কালাচাঁদপুরে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার ফ্ল্যাট। যৌথ মালিকানায় রয়েছে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের জাহানপুরে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার পৈতৃক বাড়ি ও অকৃষি জমি , একই এলাকায় ১ কোটি টাকার দালানসহ বাসস্থান , নগরীর ধোপাদিঘীর উত্তরপাড়ে ৩ কোটি টাকার পৈতৃক বাড়ি , ঢাকার গুলশান-১১৪ , কোম্পানির নামে যৌথ মালিকানায় ১৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৭ টাকার এপার্টমেন্ট , বনানীতে (রোড-২৩ , ব্লক- বি) ১২ লাখ ৯৭ হাজার টাকার এপার্টমেন্ট ও বারিধারায় পার্ক রোডে কোম্পানির নামে যৌথ মালিকানায় ৯০ লাখ টাকার আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট।

আতিক, তার স্ত্রী ও পুত্র মিলে ৩ জনের নামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। হোম লোন হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক থেকে যৌথভাবে এই ঋণ নেয়া হয় বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন। আতিক দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের জাহানপুরের বাসিন্দা।

শফি আহমদ চৌধুরী :

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য (বহিষ্কৃত) আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী বিএ পাশ। তিনি ২০০৭ সালে মামলার আসামি (ধারা-৪০৬/৪২০/২০১/১০৯/৪১১/দন্ডবিধি) হন। দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং ২০(২)২০০৭। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান।

পেশায় ইনডেন্টিং ব্যবসায়ী (রফতানি ব্যবসায়ী) শফি চৌধুরী অ্যালবার্ট ডেভিট, প্রাইভেট লিমিটেড’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ব্যবসায়ী শফি চৌধুরীর বার্ষিক আয় ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৭ টাকা , ঘর ভাড়া থেকে ২৭ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৫ টাকা ও ব্যাংক ইন্টারেস্ট থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৬ টাকা আয় করেন।

নিজ নামে নগদ ও জমা মিলিয়ে ব্যাংকে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫১২ টাকা। কন্টিনেন্টাল ট্রেভেলস লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ফিশারি এন্ড এগ্রো লিমিটেড , ট্রান্সকম সিকিউরিটি লিমিটেড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার নিজ নামে শেয়ার রয়েছে। অ্যালভার্ট ডেভিট (বিডি) লিমিটেড-এ রয়েছে ডিপোজিট মানি ও শেয়ার। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত যৌথ মালিকানায় তিনি ৫০০ বিঘা জমির মালিক। রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডে নিজ নামে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। ৪৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৭ টাকা মূল্যের একটি নতুন (রেইন রোভার জীপ) গাড়ি ও ২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পুরাতন গাড়ি রয়েছে।

বিভিন্ন ব্যবসায় তার ৩৯ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৯ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তিনি মোট ৪৯ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক। তার ৭ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭১ টাকা ঋণ রয়েছে। এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ব্যাংকিং মাধ্যমে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সায়েরা চৌধুরীর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন ৮৯ লাখ ৫৪৫ টাকা।

তিনি দক্ষিণ সুরমার পশ্চিম দাউদপুরের বাসিন্দা। অতীতে এই নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তার যে সকল অর্জন এর তালিকা হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন।

জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া :

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া স্বশিক্ষিত। তার বিরুদ্ধে কখনো মামলা হয়নি। পেশায় কৃষক জুনায়েদ কৃষি থেকে বার্ষিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও দোকান ভাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে , নিজের নামে নগদ ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা , ব্যাংকে জমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা , ৬০ হাজার টাকার ১ ভরি স্বর্ণ , ১০ হাজার টাকার মোবাইল সেট , ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র।

স্থাবর সম্পদ রয়েছে , নিজের নামে ১০ দশমিক ১৪৫ একর কৃষি জমি , ৩ লাখ টাকার ১ শতক জমি , পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৮ কক্ষের বসতঘর ও স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ৬৯ একর কৃষি জমি। তিনি বালাগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। তার কোনো ব্যাংক ঋণ নেই।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি। ২৪ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৫ জুন।

সূত্র : সিলেটভিউ২৪ডটকম
এম এউ, ২১ জুন

Back to top button