সিরাজগঞ্জ

অবৈধভাবে বালু উত্তলনে যমুনার ব্যাপক ভাঙন

সিরাজগঞ্জ, ১৮ জুন- সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের যমুনা নদী থেকে ১৪-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র প্রকাশ্যে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে এনায়েতপুর ঘাটের পাশে স্তূপ করে রেখে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুর, পাকুরতলা ও পাচিল গ্রামের ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব গ্রামের ৫০টি বাড়িঘর ও বিপুল ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই প্রভাবশালী চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনায়েতপুর থানার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ। তবে তিনি এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমি জড়িত নই।

এলাকাবাসী জানায়, সপ্তাহ ধরে এ বালু উত্তোলনের ফলে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পশ্চিম পাড়ে স্রোতের আঘাত হানায় এনায়েতপুর স্পার বাঁধ, খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়, তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুর, পাকুরতলা ও পাচিল গ্রামের ৬ কিলোমিটার এলাকা যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে।

তারা আরও জানান, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর ও স্থল ইউনিয়নের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাসহ এনায়েতপুরের ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গত ২৫-৩০ বছর ধরে অবৈধভাবে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। চক্রটি বছরে অন্তত ৬০-৭০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে থাকে। অথচ সরকারি হিসাবে, যমুনা নদীর চৌহালী অংশের কোথাও অনুমোদিত বালুমহাল নেই।

তারা আরও জানান, চক্রটি যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে আবারও বালু উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করেছে। আর এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের গাবেরপাড়া, উড়াপাড়া, মৌহালী, ইজারাপাড়াসহ আশপাশ এলাকার যমুনা নদী থেকে।

এ বিষয়ে গাবেরপাড়ার কৃষক মুল্লুক চাঁন, করিম হোসেন, রাজ্জাক ঘোষ, ধুলিয়াবাড়ির কৃষক আশরাফ হোসেন, মৌহালীর আকবার মোল্লা, সন্তু মিয়া, আছির উদ্দিন বলেন, যেসব স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা আমাদের ব্যক্তিমালিকাধীন জায়গা। শুষ্ক মৌসুমে আমরা এসব স্থানে ফসল আবাদ করি। বারবার বন্ধ করতে বলা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের আজাহার আলী, আবুল হোসেন, আরকান্দির মুজাম আলী, আবু জাফর বলেন, অব্যাহত যমুনা নদী ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। যে কয়টি বাড়িঘর আছে তাও আর বুঝি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এসব গ্রাম এবারের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, আমরা একাধিকবার বন্ধ করেছি। কিন্তু পুলিশ চলে আসার পর আবারও তারা শুরু করে।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা ইয়াসমিন বলেন, খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই এনায়েতপুর থানার ওসিকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। আবারও ব্যবস্থা নিতে বলব।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলার কোথাও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। চৌহালীর এনায়েতপুরের বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
এস সি/১৮ জুন

Back to top button