ইসলাম

বিবাহের আগে অনুষ্ঠান করে ছেলে মেয়ে দেখাদেখি কী ঠিক?

শুধুমাত্র ছেলে মেয়েকে দেখবে অন্য কেউ নয়। কেননা, শুধুমাত্র সেই তার সাথে সংসার করবে। সে মেয়ের চেহারা ও হাতের কব্জি পর্যন্ত দেখবে। তবে, সর্বাবস্থায় দেখবেন মেয়েও এ ছেলেকে দেখে পছন্দ করেছে কিনা?

আমাদের সমাজে বিবাহের আগে অনুষ্ঠান করে ছেলে মেয়েকে দেখতে আসে। দিন ঠিক করে সমাজকে জানিয়ে দিয়েই এগুলো করা হয়। ছেলে কিংবা ছেলের আত্মীয় স্বজন মেয়ে দেখতে আসে। মেয়েকে তাদের সামনে হাটানো হয়, চুল দেখা হয়, চেহারা হাত পা কোনটাই দেখতে বাদ দেয়া হয় না। এছাড়া ছেলের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হয় অথচ, মেয়ের পছন্দ অপছন্দ দেখা হয় না। এরপরও কখনো বিবাহ হয় আবার কখনো বা তাদের পছন্দ না হওয়ার কারণে বিবাহটা হতে পারে না।

মেয়ে দেখার খবর সমাজের জানতে বাকী থাকে না। আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশীর মাধ্যমে এ কথাটা এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এত জাকজমক করে মেয়ে দেখার আয়োজন করা সত্ত্বেও যখন বিবাহটা আর হয় না তখন সমাজের অনেক মানুষ তার নামে খোটা দেয়; বলতে শুরু করে এই মেয়ের আর বিবাহ হবে না। মেয়েটার ভাগ্যটাই খারাপ আরও কত কথা। এতে স্বভাবতঃই উক্ত মেয়ে কষ্ট পায়। বিষয়টা তার মনের মধ্যে দাগ কাটে। সে নিজে নিজেকে ধিক্কার দেয়-আমি কেমন হলাম যে, আমাকে মানুষ পছন্দ করে না?

আরও পড়ুন: ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা

এটা আমাদের সমাজের অনেক বড় ধরণের সমস্যা। এমন না করে আশেপাশের কাউকে না জানিয়ে শুধুমাত্র বাড়ীর গার্জিয়ানদের জানাজানির মাধ্যমে ছেলে মেয়ের দেখাদেখি করানোই তো ভাল ছিল। তাহলে, আশেপাশের কেউ তার বিরুদ্ধে সামান্যও কুৎসা রটানো কিংবা তার বিরুদ্ধে কথা বলার মত কোন সুযোগ পেত না। আর ছেলে মেয়ের চুল দেখবে কেন? সে কী বাজারের পণ্য কিংবা গরু যে, তাকে কেনার জন্য খুটিয়ে দেখবে? মেয়ের একটা আত্মসম্মান আছে। সে হাটবাজারের পশু নয় যে, গরু কেনার সময় তার দাত ইত্যাদি যেমন দেখা হয় মেয়েরও তেমনি দেখতে হবে। হ্যাঁ, অবশ্যই দেখে নিতে হবে। তবে, তাকে ভালভাবে দেখতে তার কোন মহিলা আত্মীয়কে পাঠিয়ে দেবে। সে তাকে যেমন ইচ্ছা দেখবে। মহিলারা তাদের বাড়ীতে গেলে তাদের সামনে সব কিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ছেলে মেয়েকে দেখবে তবে, তা সীমাবদ্ধ। মেয়ের আত্মসম্মানের দিকে নজর রেখেই তা করতে হবে। মেয়ের আত্মসম্মানকে পদদলিত করে তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে গরুর মত করে দেখা সমর্থন করা যায় না। তাই, ইসলাম তাদের জন্য নির্ধারিত সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামিক স্কলারদের মতে-মেয়েদের চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হাত দেখতে পারবে। তবে, কিছু কিছু ইসলামিক স্কলারের মতে পায়ের পাতাও দেখতে পারবে। এজন্য আমি এখন বিভিন্ন মেয়ের গার্জিয়ানদেরকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলি-আপনারা প্রথমেই ছেলেকে মেয়ে দেখাবেন না। তারা আগে মেয়ের সব ধরণের খোজ খবর নেবে। প্রয়োজনে মেয়ের বাড়ীতে তাদের পক্ষ থেকে কোন মহিলাকে পাঠাবে। সে তাদেরকে মেয়ে সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য দেবে। এছাড়াও সবকিছু যখন উভয় পক্ষের পছন্দ হবে তখনই শুধুমাত্র মেয়ে দেখানো যেতে পারে। মেয়ে দেখার আগে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে কথা থাকবে যে, ছেলে এবার মেয়েকে দেখবে তার পছন্দ হলে বিয়ে হবে। এরপরেই মেয়েকে দেখাবেন।

শুধুমাত্র ছেলে মেয়েকে দেখবে অন্য কেউ নয়। কেননা, শুধুমাত্র সেই তার সাথে সংসার করবে। সে মেয়ের চেহারা ও হাতের কব্জি পর্যন্ত দেখবে। তবে, সর্বাবস্থায় দেখবেন মেয়েও এ ছেলেকে দেখে পছন্দ করেছে কিনা? তার পছন্দের বাইরে বিবাহ দেয়া ঠিক নয়। কেননা, সেও একজন মানুষ। মানুষ হিসেবে তারও একটা স্বাধীনতা আছে। তার সে স্বাধীনতায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করা কখনো বৈধ হতে পারে না।

এন এইচ, ১৯ অক্টোবর

Back to top button