জাতীয়

বাঁধের দাবিতে গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে এমপি শাহজাদা

ঢাকা, ১৬ জুন – এলাকার মানুষের মনের কথা সংসদে তুলে ধরতে ভিন্নরূপে দেখা গেল পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদাকে। তিনি ‘আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’ লিখে গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন এমপি শাহজাদা।

বিষয়টি নিয়ে এস এম শাহজাদা বলেন, আমি যখন এলাকায় যাই এলাকার মানুষ আমাকে এরকম দাবি নিয়ে হাজির হয়। আমি তো এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ নই। আমি মানুষের কথা সংসদে তুলে ধরতেই তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি।

বুধবার (১৬ জুন) সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ নির্মাণের দাবি তুলে ধরেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বাজেট বক্তৃতায় শাহজাদা বলেন, সম্প্রতি ইয়াসের প্রভাবে জোয়ার এবং বাতাসের চাপে সেদিন যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল তাতে নদীর চারপাশের জমি নষ্ট হয়ে গেছে। চাষিরা যে মাছ চাষ করেছিল তাদের মাছগুলো সব সাগরে চলে গেছে। আমরা সেখানে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবার জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। আমার একটি উপজেলায় ৩৬ লাখ আর এক উপজেলায় ২১ লাখ জরুরি সাহায্য দিয়েছে। এগুলো সব দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে রোষানলে অন্যান্য জায়গাও রোষানল এসেছে বেড়িবাঁধ নিয়ে। আমার ওখানে আসলে ত্রাণ চাই না। আমার ওখানে লোকজন গিয়েছিল তারা আমাদের বলেছিল আর কোন দাবি নাই ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই। আমি ওই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ নই। এ ধরনের প্লাকার্ড এবং এই ধরনের লেখা নিয়ে সেদিন উপস্থিত হয়েছে। আমি তাদের পক্ষ থেকে এটা আমি পরে দেখাচ্ছি।

শাহজাদা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা জীবন চ্যালেঞ্জ নিয়েই সফল হয়েছেন। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা তার নামের সাথে এখন পরিপূরক। তার সরকারের এই বাজেট অবশ্যই সফল হবে এবং বাজেট ব্যবসাবান্ধব হওয়ায় আশাকরি দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি বিনিয়োগ করবে যা বেকারদেরকে চাকরির সুযোগ করে দিবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ ও মেইডইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে সিরামিক শিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী সেক্টর। দেশি-বিদেশি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ৬৮টি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৫ লক্ষাধিক লোকের। ৫০টিরও বেশি দেশে রফতানি করে বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং স্থানীয় বাজারে ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি বিকল্প পণ্য বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু বাজেটে সিরামিক শিল্প প্রতিরক্ষণের কোন প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি। উপরন্তু বিদেশি টাইলস আমদানিকে উৎসাহিত করে স্থানীয় সিরামিক শিল্পের জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই যেখানে টিকে থাকতে হিমসিম খাচ্ছি, সেখানে এ পদক্ষেপ দেশীয় ও শিল্প সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছি। এটি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে যা কাম্য নয়।

তিনি বলেন, বাজেটে গাড়ি আমদানিতে কিছু গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক বিভিন্ন স্তরে হ্রাস করেছে। যা রাস্তা থেকে অবৈধ দুর্ঘটনা প্রবল যানবাহন বন্ধ করতে সহায়তা করবে। কিন্তু এ বিষয়ে যেই গাড়িগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি ভূমিকা রাখে যেমন ২০০০ সিসির ভ্যান ক্যাটাগরির গাড়িগুলো যার ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান এগুলোর শুল্ক কমানো প্রয়োজন। এছাড়া পণ্য পরিবহনেও ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য আরও সাশ্রয়ী করা প্রয়োজন।

এমপি শাহজাদা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর, সফলতাও প্রচুর কিন্তু কিছু ঘটনা, যদিও তা বিচ্ছিন্ন ও কম তারপরেও তা আমাদেরকে কিছু একটা করার জন্য তাগিদ দেয়। মাদকসেবীরা মন্ত্রীর ফোনও ছিনতাই করে। কোভিড মহামারির কারণে আমাদের সন্তানেরা গৃহবন্দী, চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আজ ব্যাহত হবার কারণে মাদক আজ আরও বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি করে। মাদক এখন এমন আকার ধারন করেছে, যা সহজেই বহনযোগ্য। তাই এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য যেমনি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন তেমনি কিছু বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি মনে করছি। যেমন- সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত, সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ডোপ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার। এতে করে মাদক সংস্পর্শীরা একটা চাপে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় বা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয়। এই যে করোনা’র মত ভয়াবহ মহামারি তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথথোপযুক্ত নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায় নাই। আমার নির্বাচনী এলাকার চার দিকেই নদী বেষ্টিত। একদিকে তেতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ ও আগুনমুখা। নদীর নাম শুনলেই এর অবস্থা অনুমান করা যায়। ইয়াসের সময় পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি ও বাতাসের চাপে এই নদীগুলো তার ভয়াবহতা নিয়ে স্ব-রূপ প্রকাশ করেছে। আমার এলাকার মধ্যে প্রচুর চর আছে। যার মধ্যে চরকাজল, চরবিশ্বাস, চরবোরহান, চরহাদী ও চর ভুতাম উল্লেখযোগ্য। এই চর ভুতামে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে বীজ বর্ধন খামার আছে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে এই চরে গিয়ে এটা উদ্বোধন করেছিলেন। এই চরটিও ভেঙে অর্ধেক হয়ে গেছে। আমাদের এই চরগুলোর মধ্যে বেশির ভাগগুলোতেই বেরি বাধঁ নেই। যাও আছে তাও দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারের অভাবে বহু জায়গায় বিলিন হয়ে গেছে।

সূত্র : বার্তা২৪
এন এইচ, ১৬ জুন

Back to top button