পরিবেশ

দখল-ভরাট ও দূষণের শিকার বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ খাল

চট্টগ্রাম, ১৫ জুন- বঙ্গোপসাগর, কর্ণফুলী ও হালদা নদী ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরের অবস্থান। কিন্তু প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নগরের খালগুলো দখল-ভরাট ও দূষণের শিকার হচ্ছে। প্রভাবশালীরা নানাভাবে দখল করে নিচ্ছে নগরীর খালগুলো। দখলের কারণে প্রতিনিয়তই ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ।

ভৌগোলিকভাবে সাগর-নদীবেষ্টিত হওয়ায় পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে কয়টি খাল আছে এর সঠিক সংখ্যা নেই কোনো সংস্থার কাছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য মতে নগরীতে ৩৬টি খালের কথা বলা হয়েছে। চসিকের তথ্য মতে আছে ৫৭টি খাল। সিডিএর মেগা প্রকল্পে ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৫৬টি খালের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে অতীতের রেকর্ড অনুসারে চট্টগ্রাম নগরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১১৮টি খালের উল্লেখ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি খাল অস্তিত্বহীন। ৩০ বছর আগে চাক্তাই খালকে বলা হতো চট্টগ্রামের দুঃখ। একে পুঁজি করে অনেক রাজনীতি হয়েছে। সেই সুবাদে পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রতি বছর দফায় দফায় সরকারি বরাদ্দ আসে সোয়া দুই হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ফর্মুলার নামে সিল্ট ট্র্যাপ (বালু আটকানোর ফাঁদ) প্রকল্প নেয়া হয়। শেষমেশ সবই গেছে চাক্তাই খালের পেটে। অসৎ কর্তাব্যক্তি ও ঠিকাদারদের পকেটে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এছাড়া চট্টগ্রাম নগরী থেকে পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে মূলত ১০টি খাল দিয়ে। এগুলো হলো চাক্তাই খাল, রাজা খাল, বিবি মরিয়ম খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, বাকলিয়া খাল, মহেশ খাল, বোট ক্লাব খাল ও ডোমখালী খাল। ২০ ফুট প্রস্থের খাল এখন হয়ে গেছে ১০ ফুটের। খালের পাড়ে নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। খাল দখল করে ভবন করেছে স্বয়ং সিটি করপোরেশন।

স্থানীদের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা খাল দখল করে বসতি গড়ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে তো খাল দখল করা সম্ভব নয়।

এই সমস্যা বিষয়ে সোমবার (১৪ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর নগর পিতা রেজাউল করিম চৌধুরী আরটিভি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যে খালগুলো অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে। সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। ভরাট হওয়া খালগুলো সংস্কার করতে হবে। বারাইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত যে নতুন খাল সিটি করপোরেশন প্রস্তাব করেছে সেটার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

একই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আশিক ইমরান আরটিভি নিউজকে জানান, মহানগরীর খালগুলো পরিকল্পিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জরুরি। যে কোন বাধা-বিপত্তির ঊর্ধ্বে উঠে সমন্বিতভাবে তা করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। দখল-ভরাট-দূষণমুক্ত করে খাল-ছরাগুলো স্বাভাবিক ও সচল করা না হলে চট্টগ্রামকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতামুক্ত করা সম্ভব নয়। খালগুলো উদ্ধার করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিদ্রুত চট্টগ্রাম নগরীর খালগুলো দখল ও দূষণ মুক্ত করতে না পারলে অচল অবস্থা সৃষ্টি হবে। তাই সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে খালগুলো পুনরুদ্ধার এখন সময়ের দাবি।

তথ্যসূত্র: আরটিভি
এস সি/১৫ জুন

Back to top button