ইসলাম

সবসময় হৃদয়ে থাকুক আল্লাহর ভয়

মাহমুদ আহমদ

বিশ্বময় মহামারিকাল চলছে। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও আজ নিরুপায়। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানিনা কার ডাক কখন আসে। তাই প্রতিনিয়ত সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে থাকা উচিত।

এখনও যদি আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ভয় না করে উশৃঙ্খল জীবনে মত্ত থাকি তাহলে আমরা বড়ই ভুল করছি। কেননা এখন সময় এসেছে নিজেকে বদলানোর। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে তার সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হওয়া।

একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে, তার কাছে ক্ষমা চায় এবং ধৈর্য ধারণ করে। যারা সব সময় আল্লাহকে ভয় করে চলে তারাই মূলত আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা হবার সৌভাগ্য লাভ করে।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বান্দার উচিত, তার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সে যেন লেগে থাকে এবং তার অধ্যবসায়ে যেন কখনো ভাটা না পড়ে, উদ্দেশ্য সাধনের পথে কখনো যেন মনে নৈরাশ্য সৃষ্টি না হয়, যা কিছু মন্দ ও ক্ষতিকর তা যেন সে বর্জন করে এবং যা ভাল তা যেন সে আঁকড়ে ধরে এবং সব বিষয়ে সব সময় ধৈর্য ধারণ করে।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) একবার এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, নারীটি এক কবরের পাশে বসে মাতম করছিল। তিনি (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। ওই নারী বললো, সরে যাও, নিজের রাস্তায় চলো, যে বিপদ আমার ওপর পরেছে সেই বিপদ তোমার ওপর পরে নাই। প্রকৃতপক্ষে, ওই নারী মহানবীকে (সা.) চিনতে পারেনি (সেজন্যই রাগান্বিত এমন কথা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে) তাকে যখন বলা হল যে, ইনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.), তখন সে অস্থির হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় উপস্থিত হলেন আর সেখানে তাকে বাধা দেয়ার মত কোনো দারোয়ান না থাকায় সোজা সে অন্দর মহলে চলে গেল আর সবিনয়ে নিবেদন করলো, হুজুর (সা.) আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই।

তখন তিনি (সা.) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য তো দুঃখ আঘাত হানা কালেই ধারণ করতে হয় (নইলে কান্নাকাটি করে ব্যথিত-ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সবাই তো ধৈর্যেরই পথ ধরে)’ (বোখারি, কিতাবুল জানায়েজ)।

এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)-এর বড়ই আকর্ষণীয় উপদেশ রয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার যখন আমি মহানবী (সা.)-এর পিছনে (উটের পিঠে) ছোয়ারী হয়ে বসে ছিলাম, তিনি (সা.) বললেন, ‘হে স্নেহাস্পদ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা বলছি। প্রথম কথা হলো, আল্লাহর কথা স্মরণ রেখ, তিনি তোমাকে নিরাপদ রাখবেন, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে তুমি তাঁকে নিকটেই পাবে, কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আল্লাহতায়ালার কাছেই চাও, তোমার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আল্লাহতায়ালার সাহায্য যাচনা কর।

জেনে রাখ, সমস্ত লোক একত্রিত হয়ে তোমার ভাল করতে চাইলেও তারা তোমার কোনই মঙ্গল সাধন করতে পারবে না যদি আল্লাহতাআলা তা না চান আর তোমার কপালে তা না লিখেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করতে একাত্ম হয়ে যায় তবুও তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না যদি না আল্লাহতায়ালা তোমার কপালে সেই ক্ষতি লিখে রাখেন, কলম তুলে নেন, আর কালিও যায় ফুরিয়ে।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলে তুমি তাকে সামনে পাবে, স্বাচ্ছ্যন্দকালেও তুমি তাকে স্মরণ করো, তাহলে দুঃসময়েও তিনি তোমাকে মনে রাখবেন। আর জেনে রাখ, তুমি যা হারিয়েছ বা যা তুমি লাভ করতে পার নাই তা তোমার জন্য ছিল না আর যা তুমি পেয়ে গিয়েছ তা তোমারই, প্রাপ্তির বাইরে তা থাকতে পারে না, কেননা, অবধারিত নিয়তির লিখন এটাই ছিল। বুঝে নাও আল্লাহতায়ালার সাহায্য ধৈর্য্যধারণকারীদের সাথে থাকে। সুখ-আনন্দ উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাথে, হাসি-আনন্দ দুঃখ-বেদনার সাথে একীভূত হয়ে থাকে আর প্রত্যেক অভাব-অনটনের পর রয়েছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ’ (সুনান তিরমিজি)।

যারা সর্বাবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করেন আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা রাখেন তাদের সাথেই আল্লাহ থাকেন, কেননা এমন ব্যক্তিদেরকেই তিনি ভালোবাসেন।

আমরা যদি আমাদের হৃদয়কে পবিত্র করে নেই আর আল্লাহকে ভয় করে চলি তাহলে আল্লাহতায়ালাও আমাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং তার কৃপার চাদরে জড়িয়ে নিবেন।

হজরত নুমান ইবনে বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে, যা পরিশুদ্ধ হলে তার পুরো শরীর সঠিকভাবে কাজ করে; আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তার সমস্ত দেহই বিনষ্ট হয়; জেনে রাখো তা হলো কলব’ (বোখারি)।

তাই হৃদয়কে রাখতে হবে পবিত্র আর পবিত্র হৃদয়ের জন্য চাই আল্লাহর ভয়।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কোরআন ও বিশ্বনবীর শিক্ষা অনুসারে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।

এন এইচ, ১৪ জুন

Back to top button