কুড়িগ্রাম

চিলমারী নদীবন্দর উন্নয়নে ২৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়

কুড়িগ্রাম,০৮ জুন- শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের ভাওয়াইয়া গান ‘ও…কি গাড়িয়াল ভাই…হাঁকাও গাড়ি তুঁই চিলমারীর বন্দরে…..’। গানটি আজও সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকলেও, নানা কারণে হারিয়ে গেছে চিলমারী বন্দরের ঐতিহ্য। কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দরের সেই ঐহিত্য ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিকভাবে এই জেলাকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ‘চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদীবন্দর নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়।

এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০১৬ সালে কুড়িগ্রাম সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিআইডব্লিউটিএ।

প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশিদ সোমবার বলেন, সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে এসেছি। এতে মনে হয়েছে আরও আগে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া উচিত ছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে নৌ বাণিজ্য ও অতিক্রমণ প্রটোকলের আওতায় ভারতের আসাম এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে চিলমারী এলাকাকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের আওতায় চিলমারী এলাকায় একটি আধুনিক নদীবন্দর স্থাপিত হবে। ওই এলাকায় নৌপথে যাত্রী পরিবহণ এবং যাতায়াতকৃত মালামালের সুষ্ঠু নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ওঠানামা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, ৩৩ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ নৌ চলাচল চ্যানেল ও বেসিন তৈরি, ২ দশমিক ৫১ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা। এর আওতায় ২ হাজার ৪৮০ বর্গমিটার আরসিসি জেটি, এক হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্ট, ৩৭৯ দশমিক ৮ বর্গমিটার স্টিল জেটি তৈরি করা হবে। এতে ৭৮৫ মিটার তীর রক্ষা, এক হাজার ৩০৪ বর্গমিটার গুদাম, ৫টি পন্টুন, বন্দর ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ডরমেটরি থাকবে।

এছাড়া পাইলট হাউজ, শ্রমিক বিশ্রামাগার প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এই সুবিধাদি নির্মাণের মাধ্যমে চিলমারী এলাকায় বছরে প্রায় ৩ দশমিক ২৫ লাখ যাত্রী ও এক দশমিক ৫ লাখ টন মালামালের সুষ্ঠু ও নিরাপদ ওঠানামা নিশ্চিত হবে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যার জন্য চাহিদার অনুপাতে প্রয়োজনীয় যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ অবকাঠামো সুবিধা দেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মীর্জ্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম এই চিলমারী নদীবন্দর। দেরিতে হলেও এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিলমারী বন্দর কুড়িগ্রাম জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত যা জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। এ বন্দরটি এক সময় কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় এবং যাত্রী ও মালামাল পারাপারে অন্যতম প্রধান বন্দর বাজার হিসাবে পরিচিত ছিল। যমুনা নদীর ভাঙনে দিনে দিনে এ বন্দরের গুরুত্ব কমেছে।

বর্তমানে স্থানীয়ভাবে অসংখ্য যাত্রী এবং মালামাল রৌমারী, রাজীবপুর, কোদালকাঠি, নায়েরহাট, অষ্টমিরচর ইত্যাদি এলাকা থেকে চিলমারী এলাকায় ওঠানামা করে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ যাত্রী এ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে। শুধু রৌমারী ও চিলমারীর মধ্যেই প্রতিদিন বৃহদাকার ৮-৯টি জলযান আসা-যাওয়া করে থাকে। চিলমারী এবং রাজীবপুরের মধ্যেও একইরকম সার্ভিস বিদ্যমান।

৬ থেকে ৭টি বৃহদাকার ইঞ্জিন বোট বিভিন্ন স্থানে যেমন- কাওমারি, বড়চর, নয়ারহাট, অষ্টমিরহাটি ইত্যাদি স্থান থেকে নিয়মিত চিলমারীতে চলাচল করে থাকে। এছাড়া ৭০ থেকে ৮০ টন মালামাল প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ওঠানামা করে।

এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান নৌ প্রটোকলে চিলমারী একটি পোর্ট অব সেল হিসাবে চিহ্নিত। চিলমারী বন্দরটির মাধ্যমে অন্যান্য পরিবহণ মাধ্যম যেমন- সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় তীরের জনগণের জন্য অন্যতম পরিবহণ হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: যুগান্তর
এস সি/০৮ জুন

Back to top button