ব্যবসা

উচ্চগতির সুপারসনিক উড়োজাহাজ আসছে , সাড়ে তিন ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্যে!

ওয়াশিংটন, ০৫ জুন – যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ারলাইনস উচ্চগতির ১৫টি সুপারসনিক উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা কথা জানিয়েছে। মার্কিন আকাশযান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বুম সুপারসনিক থেকে এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হবে। সবকিছু ঠিকাঠাক থাকলে আগামী ২০২৯ সাল থেকে এই উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়ার্ক শহর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা আর মার্কিন শহর সান ফ্রান্সিসকো থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে যেতে লাগবে মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়।

বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও বুম সুপারসনিক গত বৃহস্পতিবার একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের চাওয়া অনুযায়ী নিরাপত্তা, চলাচল ও টেকসইয়ের শর্তগুলো পূরণ করতে পারলেই একটি বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ওভারচার নামের ওই সুপারসনিক উড়োজাহাজগুলো কিনবে। ২০২৯ সালে যাত্রী পরিবহন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। এর মধ্য দিয়ে আকাশপথে যাত্রীবহনে কনকর্ডের মতো উচ্চগতির সুপারসনিক ফিরে আসতে পারে।

ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও বুম সুপারসনিকের চুক্তি অনুসারে প্রথমে ১৫টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া আরও ৩৫টি উড়োজাহাজ কিনতে পারবে ইউনাইটেড।

তবে এই উড়োজাহাজ নিয়ে অনেক বিশ্লেষকদের মনে সন্দেহেও রয়েছে। বিশেষ করে, উড়োজাহাজের গতিসীমা নিয়ে তাঁদের এই সন্দেহ প্রবল। এই সন্দেহপ্রবণ বিশেষজ্ঞদের একজন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এআইআরের বিশেষজ্ঞ মিশেল মেরলুজিউ। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি দারুণ ধারণা, তবে এ নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।’ নতুন এই বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের প্রতিটি নির্মাণ থেকে শুরু করে চলাচলের অনুমতি পেতে এক থেকে দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।’ ২০২৯ সালের মধ্যে এই উড়োজাহাজ আকাশে উড়ানো নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। সেই ক্ষেত্রে তিনি এমন বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর জন্য ২০৩৫ বা ২০৪০ সালকে জুতসই সময় হিসেবে দেখছেন।

ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও বুম সুপারসনিক বলেছে, বুমের উড়োজাহাজগুলো বর্তমান চলাচলকারী আধুনিক উড়োজাহাজগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে উড়তে সক্ষম হবে। সেই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়ার্ক শহর থেকে লন্ডনে যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। আর সান ফ্রান্সিসকো থেকে টোকিওতে যেতে লাগবে ছয় ঘণ্টা। এই সুপারসনিক উড়োজাহাজগুলোর কার্বন নিঃসরণ শূন্য হবে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হবে।

আকাশপথে ফিরছে কি সুপারসনিক উড়োজাহাজ

১৯৭০ এর দশকে প্রথম ফ্রান্স থেকে আকাশে উড়ে বাণিজ্যিক সুপারসনিক (শব্দের থেকে দুই গুণ বেশি গতিতে) উড়োজাহাজ কনকর্ড। মূলত এয়ার ফ্রান্স ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এই উড়োজাহাজের ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয়ভার ও পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে ২০০৩ সালে এই উড়োজগুলো তুলে নেওয়া হয়। এর আগে ২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্সের একটি যাত্রীবাহী কনকর্ড দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। তখনকার কনকর্ডের আসনসংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৪৪টি। শুধুমাত্র সম্পদশালী ব্যক্তিদেরই এই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করার সক্ষমতা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, প্রযুক্তির বিকাশের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এর বাইরের কোম্পানিগুলো আরও হালকা ও টেকসই উপাদান দ্বারা উচ্চগতির উড়োজাহাজ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নকশার ইঞ্জিনও আনার চেষ্টা চলছে। নতুন এই উড়োজাহাজের জন্য হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

লক্ষ্যমাত্রার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সুপারসনিক উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদী ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী স্কট কিরবি। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সবসময় মানুষকে সংযুক্ত করা। আমরা বর্তমানে বুমের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা আরও ভালো কিছু করতে সক্ষম হব।’

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বুম সুপারসনিক বলছে, সুপারসনিক উড়োজাহাজ ওভারচারের সামরিক সংস্করণ নিয়ে তারা ইতিমধ্যে মার্কিন বিমানবাহিনীর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে।

সূত্র : প্রথম আলো
এন এইচ, ০৫ জুন

Back to top button