বিচিত্রতা

যেই গ্রামের কোনও বাড়িতে দরজা নেই!

ঘরের ভিতর জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা, গহনাগাটি নিরাপদ রাখতে মানুষ কত কিছুই না করে। বড় বড় তালা, আধুনিক লক, সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে চুরি ডাকাতির ঘটনা অহরহই ঘটছে। অথচ ভারতের মহারাষ্ট্রে শনি শিঙ্গনাপুর নামে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে কোনও বাড়িতে তালা দেওয়ার ব্যবস্থাই নেই। থাকবেই বা কি করে ? গ্রামের কোনও বাড়িতে দরজাই তো নেই।

দরজা যে শুধু গ্রামের বাড়িগুলোতেই নেই তা নয়। এ গ্রামের কোনও দোকানেও দরজা নেই। সব সময় গ্রামের বাড়িগুলো কিংবা দোকানগুলো উন্মুক্ত থাকে।টাকা-পয়সা, জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তারপরও গ্রামের কেউ অনিরাপদ বোধ করে না।

জানা গেছে, শনি শিঙ্গনাপুর গ্রামে প্রায় ৫ হাজার অধিবাসী রয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন, স্বয়ং শনি দেব তাদের গ্রাম পাহারা দেন। এ কারণে এ গ্রামে কারও বাড়িতে দরজা বা তালার কোনো প্রয়োজন নেই।

প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই গ্রামে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। জানা যায়, অনেক বছর আগে বন্যার সময়ে নদীর পানি গ্রামে ঢুকে যায় আর সেই পানিতে ভেসে আসে একটি শনি দেবতার মূর্তি। সেই রাতেই শনি দেবতা গ্রামবাসীকে স্বপ্নে তার মূর্তিটা গ্রামে স্থাপন করার আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি গ্রামবাসীকে রক্ষা করবেন এই কথাও জানান। তখন থেকেই গ্রামের সব দরজা এবং তালার ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়।

পূর্বপুরুষদের সেই বিশ্বাস এখনও ধরে রেখেছে গ্রামবাসী। তবে ঘরের মধ্যে যাতে কোনো কুকুর বা অন্য প্রাণি ঢুকে না যায এজন্য মাঝে মধ্যে তারা ঘরের সামনের দরজার মাঝখানে কাঠের প্যানেল দেন। কিন্তু সেটা স্থায়ী কিছু নয়। একমাত্র এই গ্রামেই রয়েছে ইউকো ব্যাঙ্কের শাখা, যার কোনও দরজায় তালা লাগানোর ব্যবস্থা নেই।

সময় বদলেছে। শহরের আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এই গ্রামেও। এখানকার অনেক মানুষই বহু বছরের পুরনো এই রীতির সংস্কার চান। তবে বেশিরভাগ মানুষ এখনো পুরনো রীতির পক্ষে। তারা বিশ্বাস করেন শনি দেবতাই তাদের সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।

সূত্র : বিবিসি
এম এন / ০৪ জুন

Back to top button