অপরাধ

অপহরণ সকালে, মামলা-গ্রেপ্তার দুপুরে, বিকেলেই চার্জশিট : খুশি বাদীপক্ষ

সাহাদাত হোসেন পরশ

নরসিংদী, ০৪ জুন – এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যার রহস্যের কিনারা করতে বছরের পর বছর পার হয়। ঘটনার মোটিভ, আসামি শনাক্ত ও গ্রেপ্তার এবং চার্জশিট দিতে সময় ক্ষেপণের নজির অহরহ। তবে এবার অপহরণের মতো একটি ঘটনায় মামলা গ্রহণ, আসামি গ্রেপ্তার ও চার্জশিট দাখিলে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত দেখাল নরসিংদীর পুলিশ।

সকালে অপহরণ, দুপুরে মামলা আবার একইদিন বিকেলে দেওয়া হলো চার্জশিট। অপহরণের ঘটনায় সব আসামিও গ্রেপ্তার হলো চার ঘণ্টার মধ্যে। এত দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় ভুক্তভোগী ও মামলার বাদীপক্ষও খুশি। এখন দেখার বিষয়, আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম কত দ্রুত শেষ হয়।

মামলার বাদী ও পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নরসিংদীর করিমপুর এলাকার বাসিন্দা সবুজ মোল্লা গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে শালিধা এলাকা থেকে ব্রাহ্নন্দীতে প্রাইভেট পড়তে রওনা হয়। নরসিংদীর মডেল থানাধীন সরকারি কলেজের সামনে পৌঁছলে একদল যুবক তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নেয়। ওই যুবকদের হাতে ছিল ধারালো ছুরি। গাড়িতে তোলার পর মুক্তিপণ দাবি করেন।

সবুজকে অপহরণকারীরা জানান, আত্মীয়কে ফোন করে এখন পাঁচ লাখ টাকা ব্যবস্থা না করলে তাকে মেরে ফেলা হবে। এরপর সবুজ তার মামা আবু বকরের মোবাইল ফোন দিলে তারা সেখানে ফোন করে মুক্তিপণ চান। টাকা না দিলে গুম করার ভয় দেখান। এরপর সবুজের মামা আবু বক্কর বিষয়টি দ্রুত পুলিশকে জানান। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শিবপুর মডেল থানাধীন ঘাগটিয়া পুকুর পাড়ে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর অপহরণকারীরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় তাদের ধরে ফেলে পুলিশ।

চার অপহরণকারী হলেন, নাদিম মিয়া, আরিফ মিয়া, প্রান্ত চন্দ্র দাস ও মো. মামুন। তাদের পরিবারের সব তথ্য-উপাত্ত তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করে পুলিশ। জড়িতদের কাছ থেকে ছুরি, গাড়ি ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, ঘটনার পর অপহৃত ছাত্রকে দ্রুত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের ধরার পর ওই ছাত্র তাদের চিহ্নিত করে। সে বাদী হয়ে মামলা করেছে। ছাত্রের বক্তব্য, অন্যান্য আলামত বিশ্নেষণ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে এ ঘটনায় চারজনের নাম বেরিয়ে আসে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এত আলামত এবং তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এ মামলায়, কারও ১৬৪ ধারার জবানবন্দির দরকার নেই।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনাটি জানার পরই পুলিশ সদস্যদের কয়েকটি ধাপে ভাগ করে তদন্ত কার্যক্রমে নিয়োজিত করা হয়। তাই এত দ্রুত মামলার সব কাজ শেষ করা হয়েছে। এই চক্রটি পেশাদার। তাদের একজনের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় আগেও অপহরণের মামলা হয়েছে।

অপহরণের শিকার কলেজছাত্র সবুজ মোল্লার মামা আবু বক্কর বলেন, তার ভাগ্নে নরসিংদীর ন্যাশনাল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বৃহস্পতিবার হঠাৎ ভাগ্নের ফোন থেকে কল করে একজন পাঁচ লাখ মুক্তিপণ চায়। টাকা দ্রুত না দিলে ভাগ্নেকে জীবিত পাওয়া যাবে না বলে ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়। এরপরই দ্রুত ৯৯৯-এ কল করে সহযোগিতা চাই। ছুটে যাই নরসিংদী জেলা পুলিশের কাছে। অল্প সময়ের মধ্যে তারা ভাগ্নেকে উদ্ধার করে। পরে আরেক দফায় ফোন করে শাসায়- পুলিশকে জানালে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

আবু বক্কর আরও বলেন, অপহরণের পর পরিবারের সবাই আতঙ্কে ছিল। এত দ্রুত সময়ে জীবিত উদ্ধার, সব আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার চার্জশিট দেওয়া হলো, এতে আমরা কৃতজ্ঞ। অপহরণকারীদের কেউ আমার ভাগ্নের পরিচিত নয়।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০৪ জুন ২০২১

 

Back to top button