সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না
সিলেট, ৩১ মে – গত শুক্র ও শনিবার কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন আশঙ্কা থেকে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছুটা তৎপরতা শুরু করেছে প্রশাসন। নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও তালিকা তৈরি করছে সিটি করপোরেশন।
ইতোমধ্যে নগরের ২৫ টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এরমধ্যে ৭টি ভবনকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বন্ধ রাখার নোটিশ দেওয়া ভবনগুলো আরও ৫ বছর আগেই ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিলো সিসিক। তবে অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ থেমে যায়। এইসময়ে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনগুলো।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ভূমিকষ্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নগরের ৩২টি ভবনকে চিহ্নিত করে সিসিক। সেসময় ওই ভবনগুলো ‘অতি দ্রুত’ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। মালিকপক্ষ না ভাঙলে নিজেরাই ভবনগুলো ভেঙে দেবে বলে জানায় সিসিক। এরমধ্যে দুএকটি ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরুও করে সিসিক। তবে এরপরই আটকে যায় কাজ।
পরে সিসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভাঙা নয়, মেরামত করা হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। কিন্তু সেই মেরামতও পাঁচ বছরে সম্পন্ন হয়নি।
সে সময় সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, কেবল ৩২টি নয়, নগরীতে আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের তালিকা করে নোটিশ দেওয়া হবে। এদের মধ্যে শপিং মল, অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেলও রয়েছে। যদিও এসব বহুতল ভবনের বেশিরভাগেরই নির্মাণ অনুমোদন নেই। তবে এই তালিকা করার কাজও আর এগোয়নি।
২০১৬ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তৈরিকৃত তালিকায় ছিলো অনেক বাসা-বাড়ি, বিপনীবিতান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
তালিকাতে থাকা বিপনীবিতানগুলো হচ্ছে- নগরীর জিন্দাবাজারস্থ রাজা ম্যানশন, বন্দরবাজারস্থ মধুবন সুপার মার্কেট, সুরমা মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি বিপনীবিতানও।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা অন্যান্য ভবন হলো- কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ভবন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস ভবন, সিলেট জেলা এসএ রেকর্ড অফিস, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কারিগরী ইনস্টিটিউট, সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, মদিনা মার্কেট এলাকার কিছু বাসা-বাড়ি, আজমীর হোটেল, মাহমুদ কমপ্লেক্স এর পিছনের বাসা, সিটি সুপার মার্কেট বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারের রহমান প্লাজা, মিতালী ম্যানশন, সিলেট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শেখঘাটের পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের সাথের বাসা, সিলেট মদন মোহন কলেজের নবনির্মিত ভবন, পূর্ব শাহী ঈদগাহের খান কুঞ্জ, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬ শেখঘাট, চৌকিদেখীর সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ নম্বর বাড়ি, ভাতালিয়ার ১১৮ নম্বর বাসার সীমানা দেয়াল, পুরান লেনের কিবরিয়া লজ, ভার্থখলার বাবর ট্রাভেলস ও খার পাড়া মিতালী আবাসিক এলাকার ৭৪ নম্বর বাড়ি।
এরপর ২০১৯ সালের আরেক জরিপে জানানো হয় নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে ২৫টি। সেগুলো হলো- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ।
এছাড়া, নগরের শেখঘাট এলাকায় শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানি-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার। এর মধ্যে পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে।
গত শুক্র ও শনিবার কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর রোববার এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শনে যায় সিসিক। পরিদর্শন শেষে সিসিকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন/ইমারতের তালিকায় থাকা সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশ্যান ও রাজা ম্যানশন মার্কেট আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এদিকে জিন্দাবাজারের জেন্টস গ্যালারী নামক একটি দোকান ও ফনিটুলার একটি আবাসিক ভবন ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ায় সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করিয়ে এবং মাটির পরীক্ষা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এসব বহুতল ভবন। এ ছাড়া প্রায় শতাধিক ভবন রয়েছে যেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। এসব ভবন এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরা এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে বসবাস। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের ব্যাপারে এত দিন অনেকটাই উদাসীন ছিল সিলেট সিটি করপোরেশন।
৫ বছর আগেই উদ্যোগ নিয়েও কেনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিলো। তবে পরে বিশেষজ্ঞরাই ভবনগুলো না ভেঙে সংস্কারের পরামর্শ দেন। কিছু ঝুঁকিপূর্ণূ ভবন মালিক কর্তৃপটক্ষ সংস্কার করেছেনও। আবার কয়েকটি মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে।
সূত্র : সিলেটটুডে২৪
এন এইচ, ৩১ মে