ভোলা

কষ্টে ভোলার নিম্নাঞ্চলের ১১ হাজার পরিবার

ভোলা, ২৯ মে– ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ভোলার উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চল। কমতে শুরু করেছে নোনা পানির জোয়ার। কিন্তু কমেনি দুর্গত এলাকার মানুষের ভোগান্তি। খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে অসহনীয় কষ্টে আছেন তারা।

গত তিন দিনেও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ইয়াসের হানায় দ্বীপজেলা ভোলার সাত উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৬৫৯টি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩০৯টি পরিবার। গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা তিন হাজার ৫৭৯ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সাত হাজার ৭৩০ পরিবার। এতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ। জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার গরু-মহিষ। নিম্নাঞ্চলের মানুষ সামান্য কিছু শুকনো খাবার পেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো সহায়তা না পেয়ে হতাশ।

ঝড়ে ঘরবাড়ির পরই বেশি ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর। দু’দিনের অতিজোয়ারে জেলার বিভিন্ন চর থেকে পাঁচ হাজার মহিষ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। নোনা পানির কারণে চরাঞ্চলে মহিষের মড়ক দেখা দিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নিয়েও নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবারের জলোচ্ছ্বাসে মেঘনা-তেঁতুলিয়াপাড়ের ৫০টি স্থানে প্রায় ১৬ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাগরকূলের ইউনিয়ন ঢালচরের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, তার ইউনিয়নের ১০০ বসতঘর ও অর্ধশতাধিক মাছের আড়ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়নের সব বাসিন্দা। জোয়ারের পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে এখনও নোনা পানিমুক্ত হয়নি। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে।

চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০০ মানুষকে শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছু দেওয়া হয়নি। সবকিছু তলিয়ে থাকায় এবং জ্বালানি সংকটের কারণে মানুষ খাবার রান্না করতে পারছেন না। এতে খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। ভোগান্তিতে থাকা এসব মানুষের জন্য চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী ও গৃহনির্মাণ উপকরণ জরুরি বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান।

ঢালচরের মতো একই অবস্থা চরকুকরী-মুকরী ও চরপাতিলায়। চরপাতিলার ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া জানান, মাথা গোঁজার জন্য ঘর প্রস্তুত করাই এখানকার বাসিন্দাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দরিদ্র চরবাসীকে গৃহসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করলে ভালো হবে। এ মুহূর্তে গরু-মহিষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। মিঠা পানি আর গোখাদ্যের সংকট চরমে। এ দুই ইউনিয়নের মতোই চরনিজাম, কলাতলীর চর, চরজহির উদ্দিন, মদনপুর, নেয়ামতপুর, মাঝের চর ও রাজাপুরের দুর্গত এলাকায়ও পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ কমেনি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জলোচ্ছ্বাস থেকে ভোলাকে রক্ষা করতে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে ১১৪ কিলোমিটার বাঁধে স্থায়ী সুরক্ষা থাকলেও বাকি এলাকার নিরাপত্তা মাটির বাঁধের ওপরই নির্ভর করছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল জানান, শনিবার পর্যন্ত তারা ১৩৪টি পশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির তালিকার কাজ চলছে। তবে দক্ষিণের চরগুলোতে নোনা পানির কারণে মহিষের বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে। পানিবন্দিদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

সূত্র : সমকাল
এম এন / ২৯ মে

Back to top button