কানাডা ও আমেরিকায় পুরুষ ও নারী দেহের শুক্রানু এবং ডিম্বানু দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। কোন রাখ-ঢাকের ব্যাপার নয়। পত্রিকায় রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে এর ক্রয়-বিক্রয় চলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন এখন নিয়মিত দেখা যায়। ইন্টারনেটেও এ বিষয়ক ওয়েব পেজ খোলা হয়েছে। নারী দেহের ডিম্বানুর দাম দুই হাজার ডলার থেকে ৩৫ হাজার ইউএস ডলার।
মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার সংবাদ নতুন কিছু নয়। ধনী দেশগুলোতে বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ রক্ত দান করে থাকে। কেউ কেউ মৃত্যুর আগে লিখে যায় তার চোখ যেন কোন দৃষ্টিহীনকে দান করা হয়। কিডনীও লোকে দান করে।
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর দুটো কিডনী নষ্ট হয়ে যায়। বাঁচা মরার প্রশ্ন ছিল। বন্ধুটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। হাসপাতাল আর ডাক্তারের চেম্বারে তাকে সকাল বিকাল দৌড়াতে হতো। ঐ ফ্যামিলি ডাক্তারের চেম্বারে এক ভিনদেশী মেয়ে কাজ করে। মেয়েটির বিয়ে হয়নি। বন্ধুর অবস্থা দেখে সে মেয়েটি একদিন প্রস্তাব রাখলো ‘দেখো, আমার রক্তের গ্রুপের সাথে যদি তোমার স্ত্রীর রক্তের মিল হয় তবে আমি আমার একটা কিডনী তাকে দান করতে চাই’। আমার বন্ধুটির দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নামতে থাকে। নিজেকে স্থীর রাখতে পারে না। এমনকি ধন্যবাদ দিতেও ভুলে যায় । কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে আমার কাছে ঘটনাটি বললো- ‘আত্মীয় না, পরিচিত না, দেশেরও না, এমনকি এক ধর্মেরও না কিন্তু মেয়েটির এ উদারতা এ বিশ্বের মানুষ সম্পর্কে আমাকে নতুন ধারণা দিল’।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দান করার সংবাদ তেমন পাওয়া যায় না। তবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়ের খবর পাওয়া যায়। অনেক গরীব নিরীহ মানুষ নাকি রক্ত বিক্রি করে সংসার চালায়। অভাবের তাড়নায় মানুষ নিজের কিডনী বিক্রি করে ফেলে।
কানাডা ও আমেরিকায় পুরুষ ও নারী দেহের শুক্রানু এবং ডিম্বানু দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। কোন রাখ-ঢাকের ব্যাপার নয়। পত্রিকায় রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে এর ক্রয়-বিক্রয় চলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন এখন নিয়মিত দেখা যায়। ইন্টারনেটেও এ বিষয়ক ওয়েব পেজ খোলা হয়েছে। নারী দেহের ডিম্বানুর দাম দুই হাজার ডলার থেকে ৩৫ হাজার ইউএস ডলার।
নিঃসন্তান দম্পতিরা এর ক্রেতা। ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক-
‘একটি বিবাহিত দম্পতি ককেশিয়ান নারীর ডিম্বানু নিতে আগ্রহী। যোগাযোগ….’।
এটা ছিল একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন। অন্য আরেকটি বিজ্ঞাপনের ভাষা হচ্ছে- ‘আবশ্যক ঃ নিঃসন্তান রমনীর জন্য ডিম্বানু আবশ্যক। দাতাকে অবশ্য নীল চোখ, রোগমুক্ত হতে হবে। উপযুক্ত অর্থ প্রদান করা হবে। যোগাযোগ…..’।
এ ধরনের বিজ্ঞাপন টরন্টোর রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকার প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকায় দেখা যায়। শুধু যে ক্রেতার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তা নয়। বিক্রেতারাও ফলাও করে তাদের জীবনবৃত্তান্তসহ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ইন্টারনেটে শত শত বিক্রেতার ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত দেয়া হচ্ছে। এমনকি শরীরের উচ্চতা, চোখের রং, গায়ের রং, ওজন এবং ধর্মও উল্লেখ রয়েছে। তেমনি একটি বিজ্ঞাপনের নমুনা দিচ্ছি-
Name: Wendy
Eyes: Blue
Number of children: 0
Number of miscarriages: None
Religion of birth: Christian
Hair type: Straight
Build: Large
Complexion: Fair
Family medical problems: Grand mother’s sister-breast cancer, uncle diabetes
Personality: I’m an animal lover, people person, trusting, pretty, caring, helpful, loving, giving, hard-working, creative, fun, intelligent, talented, positve, physically co-ordinated, humour is a must and I’m just an all-rounded
Great gal!!!
এদিকে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ এই ডিম্বানু ক্রয় বিক্রয়ে এজেন্টরাও নেমে পড়েছে। তারা ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক ডিম্বানু খুঁজে বের করে। চুলের রঙ থেকে শুরু করে বিক্রেতা নারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল ইতিহাস তারা ক্রেতাকে জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেয়ার বিশেষ কারণ হচ্ছে-তুলনামূলকভাবে সেখানে সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতি তরুণী পাওয়া যায়। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন এমন একজন মহিলাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভাল মেয়ের ডিম্বানু চাই। আমি রান্তা থেকে একটি নেশাখোর মেয়ের কাছ থেকে এ জিনিষ চাই না’। আমেরিকাতে এ ব্যবসা এখন দ্রুত বিস্তার করছে। ওখানে ক্রেতা বিক্রেতারা শুধু সংবাদপত্রেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না, তারা ফ্লায়ার বিলি করে অর্থের অঙ্কও জানিয়ে দিচ্ছে।
জানা যায়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য এখন ডিম্বানু বিক্রি করতে আগ্রহী। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী তার নয় হাজার ডলার টিউশন ফী দেবার জন্য তার ডিম্বানু বিক্রি করেছে বলে খবরে প্রকাশ।
ক্যানাডার নেশভিল শহরের এক লোকগীতি শিল্পীর নাম গ্রেস। বয়স ৩০ বছর। গত দশ বছর যাবৎ তার কোন রেকর্ডিং অর্থাৎ তেমন কোন আয় না থাকায় তিনি দশ হাজার ডলার ঋণী হয়ে পড়েন। আজ থেকে কয়েক মাস আগেও তার ঘরে এমন কিছু ছিল না যা বিক্রি করে তিনি এ ঋণ শোধ করতে পারেন। এখন তিনি একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। অর্থাৎ তিনি তার ডিম্বানু বিক্রি করবেন। গ্রেস ইন্টারনেটে একটি পার্সোনাল ওয়েব পেজ খুলে সেখানে কয়েকটি ছবিসহ তার জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। তিনি বেশি অর্থ চাচ্ছেন না। মাত্র আড়াই হাজার ডলার এবং আনুষঙ্গিক খরচ দিলেই রাজি। এ পর্যন্ত ডজন খানেক দম্পত্তি তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন এর মধ্যে একজনের সাথে কথা বার্তা পাকা হয়ে গেছে। গ্রেস জানান, তিনি তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমেরিকাতে অ্যাডভান্সড ফার্টিলিটি সেন্টার অব শিকাগো নামে একটি ক্লিনিকের মুখপাত্র জানান, তারা ডিম্বানুর জন্য দশ হাজার ইউএস ডলারের বেশি দিয়ে থাকেন। ঐ মুখপাত্র আরও জানান যে, ক্যানাডার বহু বিক্রেতা এবং ক্রেতা তাদের ক্লায়েন্ট। কথা উঠেছে বিষয়টা সভ্য সমাজের দৃষ্টিতে নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কি না! টরন্টোর ফার্টিলিটি ক্লিনিকের রেজিষ্টার্ড নার্স জসেলিন স্মিথ বলেন, অবশ্যই বিচার করতে হবে এ ধরনের বানিজ্য নৈতিকতার পক্ষে না বিপক্ষে। তিনি তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এটা এক ধরনের দত্তক প্রথার মতো। তিনি আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর এ বিষয়ে জানার কি খুব প্রয়োজন আছে? এর কোন মানে নেই। কেউ কি কোনদিন তার সন্তানকে বলতে চাইবে যে তার পিতা মাত্র ৫০ ডলারের বিনিময়ে ‘স্পার্ম’ বিক্রি করেছে কিংবা তার মা মাত্র ৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করেছে ডিম্বানু!
সবচে’ বড় অসুবিধা যেটা হলো সেটা হলো মানসিক এবং মেডিক্যাল সংক্রান্ত জটিলতা। এ ধরনের শিশুরা কোনদিন জানতে পারব না কে তার আসল পিতা-মাতা।
সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন একটি দম্পতি। এ দম্পতির এক কন্যা গলার ইনফেকশনে ভুগছিল। ডাক্তার যখন তাদের জিজ্ঞেস করলো তোমাদের পরিবারের মেডিকেল হিষ্টোরি বলো তখন তারা বিস্মিত হয়ে যায় এবং তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়। এ পর্যন্ত যাদের এ ধরনের সন্তান রয়েছে তাদের কাছে দাতাদের তেমন তথ্য থাকে না অথবা একেবারেই নেই।
ডিম্বানু ব্যবসা যে উত্তর আমেরিকায় এখন একটি জমজমাট ব্যবসা হতে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মধ্যে ইন্টারনেট দিয়েছে বিরাট সুযোগ- ‘দূর কে করেছে নিকট’। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত একটি এজেন্সীর মুখপাত্র জানিয়েছেন প্রতি মাসে তাদের ওয়েব পেজ-এ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লক্ষ লোক হিট করছেন। উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন করে ডিম্বানু বিক্রয় অবৈধ ঘোষণা করা হলেও কানাডা এবং আমেরিকা এখন পর্যন্ত কোন আইন করেনি।