এ কথা কারো অজানা নয় যে, ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকরা ফুল খুব ভালবাসে। বসন্তের শুরুতে ফুলের চারা, মাটি আর ঘাস বিক্রি করে কুল পায় না দোকানিরা। অবাক বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু ফুলের গাছ আছে যেগুলো এক ঋতুতেই শেষ। এক জীবনে ফুল একবারই ফোটে। এসব দেশে ফুল ভালোবাসে না এবং ফুল আদান-প্রদান করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমন বাড়ি নেই যে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ফুলের গাছ নেই।
এ কথা কারো অজানা নয় যে, ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকরা ফুল খুব ভালবাসে। বসন্তের শুরুতে ফুলের চারা, মাটি আর ঘাস বিক্রি করে কুল পায় না দোকানিরা। অবাক বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু ফুলের গাছ আছে যেগুলো এক ঋতুতেই শেষ। এক জীবনে ফুল একবারই ফোটে। এসব দেশে ফুল ভালোবাসে না এবং ফুল আদান-প্রদান করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমন বাড়ি নেই যে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ফুলের গাছ নেই।
বিভিন্ন নগরীর অলিতে-গলিতে ফুলের দোকান। বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর থেকে শুরু করে কনভিনিয়ান্ট ষ্টোরগুলোতেও ফুল বিক্রি হয়। এছাড়া সাবওয়ের সামনে, বিভিন্ন রাস্তার মোহনায় ফুল বিক্রেতাদের দেখা যায়। প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে খুশি করতে একটি ফুলই যথেষ্ট, আর এ কথাটি মনে রেখে সন্ধ্যে বেলা নামী-দামী রেস্তোঁরায়ও বিক্রেতারা ফুল নিয়ে ঘুরে। স্মরণীয় সন্ধ্যা বলে কথা! এদেশে উঠতে বসতে ফুলের আবশ্যকতা! কারো চাকুরী হয়েছে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা! কারো বিয়ে হয়েছে তাকে ফুল দিয়ে অভিন্দন! বিদায় জানাতেও ফুল! অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যত ক্রিয়া-কর্ম আছে সবকিছুতে ফুল আর ফুল। ফুলের যেন বিকল্প নেই। সাথে থাকে একখানা কার্ড। যা বলার, যা লেখার সব ওখানেই লিপিবদ্ধ করা হয়।
কানাডার রাজধানী অটোয়াতে প্রতিবছর টিউলিপ উৎসব হয়। এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিউলিপ উৎসব। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ লাখ টিউলিপের সমাবেশ দেখার মতো। সারা পৃথিবীর মানুষ এ উৎসব দেখতে এখানে ছুটে আসে। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে ১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডের রাজকুমারী জুলিয়ানা অটোয়াতে ১ লক্ষ টিউলিপের চারা উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এটা ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে কানাডার ভুমিকার জন্য রাজ পরিবারের শুভেচ্ছা উপহার। নেদারল্যান্ডের রাজ পরিবার সে সময় কানাডায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ডাচ রাজকুমারী মার্গারেট অটোয়া সিভিক হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।
এর কয়েক বছর পর শহর জুড়ে টিউলিপ ফুটতে শুরু করলো- তখন সারাদেশের পত্র পত্রিকায় ফলাও করে এর খবর প্রচার হয় এবং তারপর থেকে টিউলিপকে ঘিরে নানান আয়োজন হতে থাকে। ঐ সময় থেকেই টিউলিপ নগরী হিসেবে অটোয়া খ্যাতি লাভ করে।
১৯৫৩ সালে অটোয়াতে প্রথম টিউলিপ ফ্যাস্টিভেল অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ন্যাশনাল ক্যাপিটেল কমিশন টিউলিপের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তারাই টিউলিপ ফ্যাস্টিভেল এর মতো বিশ্ব স্বীকৃত এ নান্দনিক উৎসবের আয়োজক। টিউলিপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের প্রতীক এবং বিশ্বজুড়ে বসন্তের সৌন্দর্য হিসেবে পরিচিত।
ব্যস্ত জীবনে কত কিছুই চোখে পড়ে, আবার অনেক কিছুই চোখে পড়ে না। কখনও কখনও কিছু কিছু দৃশ্য মনের গভীরে গেঁথে থাকে। কানাডার চিত্র পরিচালিকা দীপা মেহতার ‘রিপাবলিক অব লাভ’ ছবির এমনি একটি দৃশ্য মনের মধ্যে গেঁথে আছে। দৃশ্যটি ছিল প্রেমিকার মার সাথে তার বাবার সাময়িক বিচ্ছেদ হয়। প্রেমিক একগুচ্ছ হলুদ ফুল নিয়ে সান্তনা বা সহমর্মিতা দেখাতে তাদের বাড়িতে যায়।
প্রশ্ন জাগলো এত রঙের ফুল থাকতে হলুদ ফুল নিয়ে কেন এলো? প্রশ্নটা আর চেপে রাখতে পারলাম না। অনেককেই জিজ্ঞেস করলাম। আমার প্রশ্ন শুনে কেউ হাসে, কেউ তার মতো করে জবাব দেয়। শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হলাম চ্যাপ্টার্স বুক ষ্টোরে। খুঁজে পাওয়া গেলো কিছু বই। যেগুলোতে বর্ণনা দেয়া আছে কোন রঙ-এর ফুল কোথায়, কিভাবে, কাকে দিতে হয়। কোন ফুলের অর্থ কি, কোন রঙ-এর ব্যাখ্যা কি।
ভাবছি জীবনে কত কিছু জানার আছে; শেখার আছে আর এই জানা এবং শেখার অভাবে কতকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আর এ জীবনে না জেনে, না বুঝে কত মানুষের হাস্যরসের খোরাক হয়েছি।
গুণীজনের বাণী- ‘অজানাটা অপরাধ নয়; জানতে না চাওয়াটাই অপরাধ।’
ফুল ভালবাসার প্রতীক। ফুলের সাথে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক চিরন্তন। ফুল নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। গবেষকরা হাজার-লক্ষ ঘন্টা ব্যয় করে খুঁজে বের করেছেন কোন ফুলের কি অর্থ, কোন ফুলের কোন রঙ কী তাৎপর্য বহন করে ইত্যাদি। তারা যখন এতই কষ্ট করেছেন আমাদের তা জেনে নিতে ক্ষতি কি!
কমলা রঙের ফুল-তুমি আমার কাছে সবসময় সুন্দর।
হলুদ রঙের ফুল-আমি তোমার কাছে বিশ্বস্ততায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
লাল টিউলিপ-আমি তোমার প্রেমে উদ্বেলিত।
বেগুনি ফুল- আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।
বাবলা ফুল-আমি তুমি আমার জন্যই সৃষ্টি।
‘জিনিয়া’ ফুল-তোমার কথা মনে পড়ে।
‘পীচ’ ফুল-আমি তোমার চিরদিনের।
জেনে রাখা ভাল যে, এসব ফুল শুধু নির্দিষ্ট একটি অর্থই বহন করে না। আরো ব্যাখ্যা আছে। আরো অর্থ আছে।
ফুলের মধ্যে সর্বকালে সব দেশে গোলাপ ফুলের কদর বেশি। গোলাপ ফুল সাধারণত ঃ প্রেমের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক গোলাপ গোলাপই। অনেকেই বলেন, সুন্দরী রমণী আর গোলাপ কে কার অলঙ্কার! গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের গোলাপের বিভিন্ন অর্থ করেছেন।
যেমন- লাল গোলাপ-আবেগ প্রবণতা এবং সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন ভালবাসা বুঝায়। সাদা গোলাপ-সরল এবং আধ্যাত্মিক ভালবাসার প্রতীক। গোলাপী গোলাপের অর্থ-বন্ধুত্ব অথবা ভালবাসার শুরু। হলুদ গোলাপ-শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের স্বরূপ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি ফুলের অর্থ আর এক গুচ্ছ ফুলের মধ্যেও তফাৎ আছে। অনেক সময় দেখা যায় ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হয়। আমরা কি জানি যে কয়টি ফুল কি অর্থ নির্দেশ করে?
চলুন দেখা যাক ফুল বিশেষজ্ঞরা কি বলেন-
১টি ফুল-প্রথম দর্শনেই প্রেম।
২টি ফুল-পারস্পরিক অনুভূতি।
৩টি ফুল-আমি তোমাকে ভালবাসি।
৭টি ফুল-আমি তোমার প্রেমে দিশেহারা।
৯টি ফুল-আমরণ আমরা একসঙ্গে থাকবো।
১০টি ফুল-তুমি আমারই প্রিয় হয়ে থাকবে।
১১টি ফুল- তুমি আমার রাজকুমারী, আমার সবকিছু।
১২টি ফুল- আমি তোমারই ছিলাম এবং আছি।
১৩টি ফুল-আমরা চিরদিনের সাথী।
১৫টি ফুল- আমি খুব দুঃখিত।
২০টি ফুল- আমি সর্বদাই তোমার বিশ্বস্ত।
২১টি ফুল-আমি তোমার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৩৬টি ফুল-সারা জীবন সেই সুখকর মুহূর্তগুলো স্মরণ থাকবে।
৪০টি ফুল-প্রাণের চেয়ে তুমি আমার কাছে প্রিয়।
৯৯টি ফুল- আমৃত্যু তোমাকে ভালবেসে যাবো।
১০০টি ফুল- আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
১০১টি ফুল-তুমিই আমার একমাত্র সাথী।
১০৮টি ফুল- তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
এরপর আর কিছু নেই। সর্বশেষ প্রস্তাবটি দিতে গেলে খরচের কথাটা মনে রাখতে হবে।
অমর বাণী:
জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি’
দু’টি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!
সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ: দেশে দেশে ফুলের তাৎপর্য বিভিন্ন রকম। আপনার কোন কেনিয়ান বন্ধুর বাসায় নিমন্ত্রণ পেলে কখনোই ফুল নিয়ে যাবেন না। কেনিয়াতে ফুল হচ্ছে শোকের প্রতীক।