ইউরোপ

ইনসেপ্টাসহ আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে টিকা উৎপাদনে সহায়তার আহ্বান ডব্লিউএইচও’র

জেনেভা, ১৮ মে– বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টাসহ তেভা, বায়োলিজ ও বিশ্বের অন্যান্য যেসব কোম্পানি কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করতে ইচ্ছুক তাদের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য টিকা উৎপাদনকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।

সোমবার ডব্লিউএইচও’র প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘ইনসেপ্টা, তেভা, বায়োলিজসহ অন্যান্য কোম্পানি কভিড-১৯ টিকা তৈরি করতে প্রস্তুত। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের সঙ্গে চুক্তি করা এবং দ্রুত উৎপাদন বাড়ানো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আমরা সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিকা সরবরাহের বিষয়ে ইউনিসেফের প্রকাশিত বিবৃতির পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই, কোভাক্সকে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশাল ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জুনের শেষের দিকে ১৯০ মিলিয়ন ডোজ কোভ্যাক্স টিকার ঘাটতি থাকছে। কোভ্যাক্স কাজ করছে এবং এখন পর্যন্ত ১২৪টি দেশে ৬৫ মিলিয়ন ডোজ টিকা বিতরণ করেছে। তবে এটি আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে ধনী দেশ ও নির্মাতাদের ওপর নির্ভরশীল।’

ড. গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাজের প্রশংসা করি। তারা সরবরাহের গতি এবং পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করে চলেছে। তবে লক্ষ্য অনুসরণে আমাদের আরও উৎপাদনকারী দরকার। ফাইজার এই বছর কোভ্যাক্সকে ৪০ মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এর বেশিরভাগই এ বছরের শেষ ছয় মাসে দেবে তারা। আমাদের এখনই টিকা দরকার। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরবরাহের তারিখ এগিয়ে আনার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে টিকা ভাগ করে নিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে- এমন উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর সহযোগিতা দরকার। যারা কয়েক দিনের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে তাদের টিকা কোভ্যাক্সের সঙ্গে ভাগ করতে চাইবে, আমি সেইসব দেশকে সাহায্য করার জন্য প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে টিকা উৎপাদনকারীদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) একটি যৌথ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। এর যৌথ নেতৃত্বে আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপআই) ও দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি)।

কোভ্যাক্স উদ্যোগে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আওতায় আর্থিক ও বৈজ্ঞানিক সম্পদ ব্যবহারের পাশাপাশি ধনী দেশগুলোকে একত্র করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভারত থেকে টিকা আমদানি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়লে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোতে টিকা উৎপাদনের বিষয়টি চলে আসে। দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে কতগুলো টিকা উৎপাদনে সক্ষম তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

সম্প্রতি রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কোর কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করে। তারা নম্বর দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কেমন, সে সম্পর্কে জানায়। কোর কমিটি সর্বোচ্চ নম্বর দেয় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসকে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গত ১৩ এপ্রিল দেশেই টিকা উৎপাদনে সক্ষম এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে। সেখানে বলা হয়, স্পুতনিক-ভি উৎপাদনের জন্য অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যদি রাশিয়া টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তর করে, তবে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব।

সূত্র: সমকাল
এম এন / ১৮ মে

Back to top button