সম্প্রতি ইতালীয়ান একটি কাসকেট কোম্পানী কফিন-এর এক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। এই ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় কফিনের সাথে অর্ধনগ্ন তরুণীদের ছবি। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছাপানো এসব ছবি দেখে অনেকের কফিনের ভেতরে তাড়াতাড়ি ঢুকে যেতে মন চাইবে। ক্যালেন্ডারটির পাতায় পাতায় বিভিন্ন ধরনের বাণীও লিপিবদ্ধ আছে। যেমন একটিতে লেখা-‘স্বপ্ন হোক সত্যি, অনন্তকাল ধরে যে আপনার অপেক্ষায়…’। সুপার ইম্পোজ করে ছাপানো হয়েছে অপুর্ব এক সুন্দরী নারী কাসকেটে শুয়ে আছে, পাশেই যত্ন করে রাখা একটি বালিশ।
বহু রকমের বিজ্ঞাপন এ জীবনে দেখেছি কিন্তু এ রকম বিজ্ঞাপন কখনও চোখে পড়েনি। সেদিন টরন্টো ষ্টার পত্রিকায় বিশাল এক বিজ্ঞাপনের দিকে চোখ পড়লো। বিজ্ঞাপনটি একটি কবরস্থানের।
‘আপনি নিশ্চয় এমন একটি স্থানে আপনার সমাধি হোক চান না যেখানে আপনাকে স্মরণ করে আপনার পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের যেতে কষ্ট হবে। অতঃপর আপনার সমাধিতে একটি ফুল দিতেও কেউ কোনদিন আসবে না। এ কথা চিন্তা করেই আমরা ডাউন টাউন টরন্টোর এমন একটি মনোরম জায়গা বেছে নিয়েছি। ছায়া সুশীতল, বৃক্ষশোভিত, বিশাল সরোবরের তীরে আপনার সমাধির স্থান আজই বেছে নিন। যোগাযোগ….’।
আমরা সকলেই জানি জন্ম এবং বিয়ে হচ্ছে আনন্দ-উৎসবের আর মৃত্যু হচ্ছে শোক এবং দুঃখের । না, পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা মৃতুকে শোক এবং দুঃখের ঘটনা বলে মানতে রাজী নন। তারা চান, তাদের মৃত্যুটাও যেন আনন্দমুখর হয়। আগে থেকেই তারা মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। আর এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ফিউনারেল কোম্পানী। এছাড়া বিভিন্ন ইন্সুরেন্স কোম্পানীও শেষ বিদায়ের কিছু দায়-দায়িত্ব পালন করে থাকে।
মৃতদেহ সৎকারের জন্য ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় যে ব্যবস্থা দেখলাম তাতে অভিভূত হয়েছি। যে লোক জীবনে লিমোজিন চড়েনি, যে লোককে কেউ চেনে না। সমাজে যার কোন অবদান নেই এমন লোককেও মৃত্যুর পর রাজকীয়ভাবে সমাধিস্থ করা হয়। শুধু করে যেতে হবে ইন্সুরেন্স অথবা রেখে যেতে হবে অর্থ।
ফিউনারেল কোম্পানীগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস রয়েছে। মৃত ব্যক্তি অথবা তার নিকট আত্মীয়ের আকাঙ্খা এবং সর্বোপরি পয়সা খরচ করতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব। অনেকে মনে করেন মৃতদেহটি দেখে যেন অন্যের সুখ লাগে, আনন্দ লাগে। তাই সুন্দর নকশা করা একটি কফিনে লাশ রাখা হয়। এমবালমিং হচ্ছে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দেহকে সুরক্ষিত করা। একই সাথে পরিপাটি করে মুখমন্ডল ও দেহকে সাজানো। নতুন স্যুট-টাই পরিয়ে মেকআপ করে, চুলে জেল লাগিয়ে মখমলের কাসকেটে যখন লাশ রাখা হয় তখন দেখে মনে হবে দেশের বরেণ্য এবং অর্থশালী কোন ব্যক্তি বুঝি সুখ নিদ্রায় শায়িত।
টাকা খরচ করলে আপনার কফিন বহনকারী গাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি থাকবে। আরও একটু খরচ করলে আপনার শোক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোক সমাগম হবে। তারপরও আপনি চাইলে অর্থাৎ আরেকটু খরচ করলে আপনার শোক সভায় বক্তা হিসেবে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আসবেন এবং আপনার কর্মময় জীবন নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন যদিও তারা আপনাকে চেনেন না।
সম্প্রতি ইতালীয়ান একটি কাসকেট কোম্পানী কফিন-এর এক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। এই ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় কফিনের সাথে অর্ধনগ্ন তরুণীদের ছবি। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছাপানো এসব ছবি দেখে অনেকের কফিনের ভেতরে তাড়াতাড়ি ঢুকে যেতে মন চাইবে। ক্যালেন্ডারটির পাতায় পাতায় বিভিন্ন ধরনের বাণীও লিপিবদ্ধ আছে। যেমন একটিতে লেখা-‘স্বপ্ন হোক সত্যি, অনন্তকাল ধরে যে আপনার অপেক্ষায়…’। সুপার ইম্পোজ করে ছাপানো হয়েছে অপুর্ব এক সুন্দরী নারী কাসকেটে শুয়ে আছে, পাশেই যত্ন করে রাখা একটি বালিশ।
কফিনের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয়ের সাথে অর্ধনগ্ন নারীর ছবি দেখে আমার মতো অনেকেই বেহুশ হবার যোগাড়। জিজ্ঞেস করা হলো প্রস্তুতকারকদের- কেন তারা এ ধরনের প্রচারে নামালো। তাদের সোজা উত্তর- ‘গাড়ির বিজ্ঞাপনে যদি নারীর ছবি থাকতে পারে তবে কফিনের সাথে নারীর ছবি থাকতে অসুবিধা কোথায়?’
কাসকেট কোম্পানীর প্রধান একজন কর্মকর্তা জানান, অনেকেই আমাদের এ ধারণাকে স্বাগত জানাতে পারছেন না। তারা বলছেন মৃত্যুর সাথে যৌনতার মিশ্রণ এক ধরনের ঠাট্টা। এটা তারা মোটেই পছন্দ করছেন না। আবার অনেকে এ ধারণাকে ‘গ্রেট আইডিয়া’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন।