কক্সবাজার

বনভূমির মাটি বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি যুবলীগ নেতা

কক্সবাজার, ৩০ এপ্রিল– কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন বিভাগের রিজার্ভ পাহাড়ি বনভূমি কেটে রেলপথসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মাটির জোগান দিচ্ছেন হাসানুল ইসলাম আদর নামের এক যুবলীগ নেতা। এসব মাটি বিক্রি করে তিনি রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। আদর উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রিজার্ভ বনভূমির অন্তত ২০টি ছোট-বড় পাহাড় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে সাবাড় করে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করেছেন আদর ও তার অনুসারীরা। দিনদুপুরে এসব পাহাড়ি মাটি কেটে নিলেও বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে অনেকটাই নীরব। এই অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় এবং বর্ষায় ব্যাপক পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, বালুমহাল ইজারা নিয়ে আমি বালুর ব্যবসা করছি। পাহাড় কাটার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ডুলাহাজারার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটছি বলে অনেকে পরিবেশ অধিদপ্তরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরকে আমি পাহাড় কাটার সঙ্গে যে জড়িত না তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা, সুরাজপুর-মানিকপুর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নলবিলা বিটের উঁচু পাহাড়ি বনভূমিগুলোর মাটি কেটে পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে।

উপজেলার বরইতলী শান্তিবাজার-কৈয়ারবিল-ছিকলঘাট-কাকারা-ইয়াংছা সড়কের নির্মাণ কাজে মাটি সরবরাহ করছেন আদর। ওই সড়কে রাতদিন অন্তত ২০-২৫টি ডাম্পার ট্রাক প্রশাসনের চোখের সামনে মাটি সরবরাহ করছে। এসব মাটি সরবরাহের কারণে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার অন্তত ১২টি স্পটে বন বিভাগের রিজার্ভ পাহাড়ি বনভূমি কেটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আনলোড করতে সক্ষম এমন ১৫টি বড় ট্রাক প্রতিদিন ওই মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ডুলাহাজারা এলাকায় বগাচতর এলাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালির পাশাপাশি পাহাড় কেটে মাটিও বিক্রি করছে ইজারাদার আদরের লোকজন।

বগাচতর এলাকার লোকজন জানান, বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন পাহাড় কাটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। আদর অত্যন্ত চাতুরতা করে বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালু দেখিয়ে রিজার্ভ বনভূমির মাটি কেটে রেললাইন রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে এগার’শ টাকা, মাটি বিক্রি হচ্ছে ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা করে।

এ দিকে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন রংমহল এলাকায় পার্ক ঘেষে পাহাড়ি বনভূমি কেটে মাটি বিক্রি করছেন ওই যুবলীগ নেতা। এতে সাফারি পার্র্কের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদরের নেতৃত্বে ৪-৫ জনের সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। কিন্তু রাতের বেলায় পাহাড় কাটায় বন বিভাগ কিছুই করতে পারছে না।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ির এসিএফ মাসুদ রানা বলেন, ইতিমধ্যে পাহাড় কাটার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি মিললে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার সহকারী পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। খবর নিয়ে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: আমাদের সময়
এম এন / ৩০ এপ্রিল

Back to top button