সম্পদের জাকাত সময়মতো দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে পবিত্র কোরআনের পরতে পরতে। দুঃখজনক হলেও জাকাতের শরিয়ত নির্ধারিত বছর পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা রমজানুল মোবারকের অপেক্ষা করে থাকি। এটা ঠিক নয়। তবে রমজানের বরকত ও পুণ্য লাভের জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই রমজান উপস্থিত হলে তখন জাকাত দিলে কোনো সমস্যা নেই। তবে পরে দিলেও জাকাত আদায় হবে।
জাকাত কী? আমরা জানি, জাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া। জাকাত আদায় করার দ্বারা যেহেতু অবশিষ্ট সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়, তাই তাকে জাকাত বলা হয় অথবা জাকাত আদায় করার কারণে যেহেতু অবশিষ্ট সম্পদে বরকত লাভ হয়, তাই তাকে জাকাত বলা হয়। বিশেষ বিশেষ সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ কোনো ধরনের বিনিময় ছাড়া একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য কোনো দরিদ্র মুসলমানকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার নামই শরিয়তের পরিভাষায় জাকাত।
জাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ বিধান। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ৮২টি স্থানে সালাতের সঙ্গে সঙ্গেই জাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে ইরশাদ হয়েছে, ‘সালাত কায়েম করো।’ সঙ্গে সঙ্গে আবার ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৩)।
হুবহু এমন কিংবা এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। নামাজ আদায় করা এবং জাকাত প্রদান করাকে ঈমানের বিশুদ্ধতা, আল্লাহতায়ালার প্রতি আনুগত্য ও মুসলমানদের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধের নিদর্শন আখ্যা দেওয়া হয়েছে, ‘এরপর যদি তারা কাফেররা তওবা করে, নামাজ আদায় করে এবং জাকাত দেয়, তবে তারা তোমার দ্বীনি ভাই হয়ে যাবে।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে মানুষের সঙ্গে লড়াই করার আদেশ করা হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, মোহাম্মদ (সা.) তার প্রেরিত রাসুল এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সালাত কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে। যদি তারা এসব করে, তবে নিজেদের জান-মাল তারা হেফাজত করে নিল। যদি না ইসলামের বিধান অনুযায়ী জান-মালের নিরাপত্তা রহিত হয়। আর তাদের (অভ্যন্তরের) হিসাব আল্লাহর ওপর। (সহিহ মুসলিম : হাদিস : ২২)
জাকাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এত অধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যা একত্র করলে এক মহাগ্রন্থের আকার ধারণ করবে। এই হাদিসগুলো মুতাওয়াতির হাদিসের পর্যায়ভুক্ত। মুতাওয়াতির হাদিস শাস্ত্রের বিশেষ পরিভাষা যা সনদ ও সূত্রগত বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ স্তর বুঝায়। এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, জাকাত এমনই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান, যার প্রতি সামান্য অবহেলা বা উদাসীনতাও শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
এজন্যই মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য লড়াই ঘোষণা করেছিলেন। রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদেরও দ্বিধাহীন সমর্থন ছিল তার এই অবিচল সিদ্ধান্তের প্রতি।
এন এইচ, ৩০ এপ্রিল