উল্টোসুরে কথা বলছেন বাবুনগরী
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল– হঠাৎ করেই পাল্টে গেলেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এখন তিনি উল্টো সুরে কথা বলছেন। কদিন আগেও তিনি বলেছিলেন যে, তালিকা দিন যারা আছে সবাইকে নিয়ে জেলে যাবো। কিন্তু এখন তিনি জেলে না যাবার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তার দৌড়ঝাঁপের প্রধান বাহন হয়েছে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা। এছাড়াও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুজন নেতার সাথেও জুনায়েদ বাবুনগরী নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তাদের কাছে বারবার অনুনয় বিনয় করছেন যে, তিনি কোনোভাবেই জেলে যেতে চান না।
সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কাছে জুনায়েদ বাবুনগরীর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকার যা বলবে সেভাবেই তিনি সবকিছু করবেন তবু তিনি জেলে যেতে চান না। আর তাই জুনায়েদ বাবুনগরী এখন উল্টো সুরে কথা বলছেন। শুধু জেল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উল্টো সুরে কথা বলছেন তা নয়, জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের আমির হওয়ার পর থেকে যা যা বলেছিলেন এখন সবকিছু থেকে তিনি আস্তে আস্তে পিছু হটছেন এবং সবকিছুর বিপরীতমুখী কথা বলছেন।
নভেম্বরে হেফাজতের আমির হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন যে, ইসলাম যেখানে বিপন্ন হবে, ইসলাম যেখানে আক্রান্ত হবে সেসব বিষয়েই তারা কথা বলবেন এবং মাথা ঘামাবেন। এখন বাবুনগরী বলছেন যে, হেফাজতে ইসলাম কওমি মাদ্রাসার বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে মাথা ঘামাবে না এবং মাথা ঘামানোর দায়িত্ব হেফাজতের নেই।
হেফাজতের এই আমির বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ তারা যে কোনো মূল্যে বাধাগ্রস্থ করবে। এখন তিনি বলছেন যে, হেফাজত প্রয়োজনে এই ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষে ফতোয়া দিবেন অর্থাৎ বাঁচার জন্য এখন তার আগের অবস্থানও পাল্টে ফেলেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। জুনায়েদ বাবুনগরী ২৬-২৭ মার্চের পর সরকারকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, সরকার যদি হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে তাহলে সারাদেশে দাও দাও করে আগুন জ্বলবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দিয়ে বলেছিলেন, সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু এখন যখন হেফাজতের শীর্ষ সব নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তখন জুনায়েদ বাবুনগরী চুপচাপ দেখছেন। এর ফলে হেফাজতে দুই রকম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
প্রথমত, দলের অন্য নেতারা বলছেন যে, জুনায়েদ বাবুনগরী আমাদের নেতা। আমাদের এতগুলো নেতা গ্রেফতার হলো অথচ জুনায়েদ বাবুনগরী ভূমিকাহীন। তিনি আমাদের গ্রেফতারকৃত নেতাদের উদ্ধারের কিছুই করছেন না। এ প্রসঙ্গে হেফাজতের অনেক নেতাই ২০১৩ এর উদাহরণ দিচ্ছেন। সে সময় হেফাজতের অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছিলো।
আহমদ শফী তখন ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সরকারের সাথে দেন-দরবার করে এই আটক নেতাদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরীকে এখন সকলে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তাদের অনেক নেতা মনে করছেন যে, জুনায়েদ বাবুনগরী শুধু নিজে বাঁচার জন্য অন্যদেরকে জেলে ঠেলে দিচ্ছেন। আর এ কারণেই হেফাজতে তার অবস্থা কোণঠাসা হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, সরকারও জুনায়েদ বাবুনগরীকে এখন বিশ্বাস করতে পারছেন না। সরকার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। তাকে গ্রেফতার করা হবে সবকিছু ঠিকঠাক করে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিগত ক্রোধ বা আক্রোশ থেকে নয় বরং সত্যিকারের একজন অপরাধী তার অপরাধের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ নিয়েই গ্রেফতার করা হবে বাবুনগরীকে।
সূত্র : বাংলা ইনসাইডার
এম এন / ২৯ এপ্রিল