পশ্চিমবঙ্গ

এই প্রথম গণনার আগে ও নির্বাচনের ঠিক পরে প্রার্থী, এজেন্টদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকলেন মমতা

কলকাতা, ২৯ এপ্রিল – এই প্রথম তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের পরে ও গণনার আগে দলের প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করছেন। আগে ঠিক ছিল এই বৈঠকটি হবে ভোট গণনার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার দুপুরে। সেই বৈঠকেও দলের প্রার্থী ও নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়েই বৈঠক করার কথা ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু বৃহস্পতিবার অষ্টম দফার ভোটগ্রহণ চলার সময় বৈঠকের দিনক্ষণ বদল করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর নতুন দিনক্ষণ জানিয়েও দেওয়া হলো দলের প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের।

তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে , ১ মে-র বদলে ৩০ এপ্রিল শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ এই ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। ইতিমধ্যে দলের সমস্ত প্রার্থীদের কাছে বৈঠকের দিন ও সময় বদলের বার্তাও পৌঁছে গিয়েছে দলের তরফে । বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদেরও।

করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়ালি ওই বৈঠকে তৃণমূলের ২৮৯ জন প্রার্থী এবং তাঁদের এজেন্টদের সঙ্গে গণনা প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

২০১১ বা ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর এবং গণনার আগের দিন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরণের কোনও বৈঠক করেছেন বলে করোও জানা নেই। তাহলে এবার কী হল যার জন্য তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন পর্ব মিটে যেতেই গণনার আগে প্রার্থী ও নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন? এই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে যেমন ঘুরছে, তেমন তৃণমূলের অন্দরেও ঘুরছে। শুক্রবারের বৈঠকে গণনা নিয়ে দলকে নির্দেশ দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা এবার নির্বাচনী প্রচারে জনসভা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার বলেছেন, গণনার সময় কাউন্টিং এজেন্টরা কী ভাবে কাজ করবেন। কত বার ইভিএম অফ-অন করে পরীক্ষা করতে হবে।

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-এর ২৯১ জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য দিকে, খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ করোনা আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন । এই দু’জন বাদে বাকি ২৮৯ জন প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজির থাকার কথা রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট গণনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। বলা হয়েছে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ না হলে গণনাকেন্দ্রে কাউন্টিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না । এদিকে বুধবার রাতেই এই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে দাবি করে নির্বাচন কমিশনকে পাল্টা চিঠি দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে কলকাতার নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে নিজেদের আপত্তির কথাও জানিয়েছে এসেছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। এবার করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি গণনাকেন্দ্রেই টেবিলের সংখ্যা এক রেখে ঘরের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে শুক্রবারের বৈঠকে নতুন নিয়ম প্রসঙ্গে প্রার্থী ও নির্বাচনী এজেন্টদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিতে মমতা এই জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন।

তবে এই বৈঠক নিয়ে অন্য আর একটি কথাও রাজনৈতিক মহলে শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি-র উত্থানের ফলে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের যদি পতন হয়, সেই পরিস্থিতিতে দলের করণীয় কী? বৈঠকে সেই বিষয়টিই গুরুত্ব পেতে চলেছে। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, “আমার সরকার গোড়ার জন্য ২০০ আসন চাই। সেটা না পেলে গদ্দাররা টাকার জন্য পালিয়ে যাবে, আগে যেমন গেছে।” এদিকে বিজেপি নির্বাচনের আগে থেকেই দাবি করে আসছে তারা ২০০ -র বেশি আসন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। যদি বিজেপি ১৬৫টি আসন পেয়ে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় চলে আসে, তাহলে তৃণমূলের বাকি বিধায়কদের তৃণমূলে ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই এই পরিস্থিতিতে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করতে কী করা উচিত, সেই বিষয়েও শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সূত্র : কলকাতা২৪x৭
এন এ/ ২৯ এপ্রিল

Back to top button