পশ্চিমবঙ্গ

দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়েই ক্ষমতায় থাকছি, দাবি মমতার

কলকাতা, ২৭ এপ্রিল – বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম ধাপের ভোট গ্রহণ হয়েছে।

ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখার্জি, সুব্রত সাহা, জাকির হোসেন, ফুয়াদ হালিম, সায়নী ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল, রুদ্রনীল ঘোষ ও ঐশী ঘোষের মতো একঝাঁক তারকাপ্রার্থী লড়াই করেছেন এই ধাপে। ২৯ এপ্রিল শেষ ধাপের ভোট গ্রহণের পর ২ মে সবার লড়াইয়ের ফল ঘোষণা করা হবে।

এই লড়াইয়ে দুই-তৃতীয়াংশ আসন ধরে রেখেই বিধানসভার ক্ষমতায় থাকছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সপ্তম ধাপের ভোট গ্রহণের দিনই শেষ হলো অষ্টম ধাপের ভোটের প্রচারও। ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করার যে নির্দেশনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের, সেই অনুযায়ীই সোমবার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের ডামাডোল থেমে গেল।

‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে একদিকে বিজেপি যখন ২০০ আসনের দাবি করে চলেছে এখনও, তখন মমতার দাবি দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখছেন তিনিই। এর আগে এতটা জোর গলায় না বললেও গতকাল কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে বসে ভার্চুয়াল সভায় মমতা বলেন, ‘মা মাটি মানুষের সরকার মেজরিটি নিয়ে জিতবে। তবে ভোটের পর সবাইকে ক্ষমা করতে পারি কিন্তু গাদ্দারদের ক্ষমা করব না।’ এ সময় নন্দীগ্রামে তার জয় হবে বলেও দাবি করেন মমতা। অবশ্য শুভেন্দুর দাবি, তার কাছে ৫০ হাজার ভোটে হারবেন মুখ্যমন্ত্রী।

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রাখা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এখানে এসে জায়গা দখল করে রেখেছে। তিন মাস ধরে তাদের এনে রেখেছে বিজেপি। তাদের জন্য এই করোনার মধ্যেও সেফ হাউস করতে পারছি না। কমিশনকে অনুরোধ করছি, দয়া করে তাদের নিয়ে যান।

সপ্তম ধাপে ভবানীপুরসহ পাঁচ জেলার ৪৩ আসনে ভোট হয়েছে। নিজের কেন্দ্র ছেড়ে এবার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন মমতা। তবে তিনি ভবানীপুরেরই ভোটার। সোমবার সেখানে নিজের ভোট দেন মুখ্যমন্ত্রী।

সপ্তম ধাপের ভোট ঘিরে রক্তপাত না হলেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। আসানসোল দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্টের মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো টুপি নিয়ে আপত্তি তোলেন ওই আসনের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষকে। আসানসোল উত্তরে মলয় ঘটককে ধাক্কা মারার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কলকাতার রাসবিহারী আসনে বিজেপি প্রার্থীর এজেন্টের বিরুদ্ধে শ্নীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।

সপ্তম ধাপের ভোটে লড়াই করেছেন চারজন মন্ত্রী, ডজনখানেক নামি রাজনীতিক, চলচ্চিত্র তারকা, অর্থনীতিবিদ, লড়াকু ছাত্রনেতা। তবে এ ধাপে রাজনৈতিক তারকা প্রার্থী বেশি। কড়া নিরাপত্তা এবং করোনাবিধি মেনে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে।

সপ্তম ধাপে তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের বিদায়ী পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি (বালিগঞ্জ), পৌরমন্ত্রী ও কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম (কলকাতা বন্দর), বিদায়ী বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (ভবানীপুর), বিদায়ী আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক (আসানসোল উত্তর), কলকাতা পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র পরিষদ দেবাশীষ কুমার (রাসবিহারী), আসানসোলের সাবেক মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (রানীগঞ্জ), রাজনৈতিক নেতা ইদ্রিস আলী (ভগবানগোলা)। এ ধাপে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী জাকির হোসেন (জঙ্গিপুর) ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (আসানসোল দক্ষিণ)।

সপ্তম ধাপে বিজেপির তারকাপ্রার্থীরা হলেন- বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী (বালুরঘাট), ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান সুব্রত সাহা (রাসবিহারী), আসানসোল পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি (পাণ্ডবেশ্বর), ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল (আসানসোল দক্ষিণ) এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (ভবানীপুর)।

বাম দল সিপিএমের উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন- পশ্চিমবঙ্গের সাবেক স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে খ্যাতনামা চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম (বালিগঞ্জ) এবং দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ঐশী ঘোষ (জামুড়িয়া)।

এন এইচ, ২৭ এপ্রিল

Back to top button