কমিটি বিলুপ্তির পর কৌশলী হেফাজত
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল – গ্রেপ্তার ও মামলা আতঙ্কে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলাম। দলের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ গত ১০ দিনে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতার গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসায় হেফাজতের নেতাদের মধ্যে ভয় দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা এবং সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু বাড়িতে হামলার মধ্য দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সহিংসতার পরও মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেয়। মোদির সফরের সময় ভারতবিরোধী বিদ্বেষ ও সহিংসতার তদন্তে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করে পুলিশ। প্রথমেই কয়েক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর মামুনুল কমিটি বিলোপ করে কৌশলী হেফাজত হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হেফাজতের কয়েক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে বেরিয়ে আসে, কারা কীভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল ও নরেন্দ্র মোদি তথা ভারতবিরোধিতার ছক কষেছিল। হেফজাতের সরকার উৎখাত ও স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্যও বের করে পুলিশ। রিমান্ডে থাকা নেতাদের কাছ থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের একাত্ম হয়ে কাজ করা এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের কৌশল বেরিয়ে আসে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরীর হুট করে কমিটি বিলুপ্ত করার ঘটনায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা তাদের কৌশল। হেফাজত যখনই কোনো সমস্যা পড়ে তখনই তারা ক্ষমতাসীনদের কাছে সমঝোতা করতে আসে। কিন্তু তারা তাদের আদর্শ থেকে একটু নড়েনি। এই দলটি স্বাধীনতাবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের দল। এদের বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। বাবুনগরী বা মামুনুল হক এবং তাদের কমিটির যে ২৪৯ জন রয়েছে তারা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রদ্রোহী। এদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আটক করে শাস্তি দিতে হবে।
তারা বলেন, তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে কমিটি ভেঙে, একাংশকে সবকিছুর জন্য দায়ী করে সবার চোখে ধুলো দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। একটা সময় পরে তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হবে। তাই সরকারকে কোনোভাবেই নমনীয় হওয়া যাবে না। বাবুনগরীসহ হেফাজতের কমিটির সবাইকে গ্রেপ্তারের পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তারা বলেন, ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ পরবর্তী মতিঝিলে এক সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে। সরকারকে তা বাস্তবায়নের জন্য তখন আলটিমেটাম দেয় সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এই ১৩ দফার বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। কাজেই মোদির সফর বা ভারতবিদ্বেষী বিষয় ছাড়াও এই ১৩ দফা থেকে সরে আসতে হেফাজতকে বাধ্য করতে হবে।
গবেষক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, তারা তালেবানি শাসন কায়েম করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ধর্মের কথা বলে তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আসছে। আমরা আগেও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি এদের বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। এই হেফাজত শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের জন্য সার্বক্ষণিক ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশের স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুরো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক রাষ্ট্রের মধ্যে আরেক রাষ্ট্র চলতে পারে না। এই দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার ইতিহাস কওমির শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। তাদের সিলেবাস পরিবর্তন করতে হবে। মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত বাজানো, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও অন্যান্য জাতীয় দিবস পালন করতে হবে। আর বাবুনগরী এখন যতই বলুন তিনি দায়ী নন, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। বাবুনগরী হলো নাটের গুরু। তাকে সবার আগে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকারকে এর আগেও হেফাজতের সঙ্গে নানা নরম গরম আচরণ করতে দেখেছি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই বুর্জোয়া দল নানা সমীকরণে এই সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এরা এখন বিপদজনক হয়ে উঠেছে। সরকারকে বলব, এই হেফাজতের সঙ্গে চুক্তি করে পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেটি বাতিল করুন। আর জনগণের ভাত-কাপড় এবং মৌলিক অধিকারের দিকে নজর দিন। তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধান অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তুলে ধরে বলেন, এই হেফাজতের নেতারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজ করেছে। তারা তাদের মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এদের সবকিছু বেরিয়ে এসেছে। তাই তারা কমিটি বিলুপ্ত করেছে। এটা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছু নয়।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বাবুনগরীর নাটকের সিরিজ শুরু হয়েছে। এটা আইওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। সরকার এখনো সঠিক পথেই আছে। তবে সরকারের ভেতরের মানে আওয়ামী লীগের ছোট একাংশের কথা শুনে হেফাজত ইস্যুতে আর সমঝোতায় যাওয়া ঠিক হবে না। এটা একটি জঙ্গি সংগঠন। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কখনো দেশের জন্য ভালো কিছু করবে না। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফরে যে জঙ্গি ও সহিংসতা হয়েছে, তার দায় বাবুনগরীসহ সবার। কমিটি বিলুপ্ত করে তারা নতুন নাটক সাজিয়েছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধিতা দেখাচ্ছে , এটা স্রেফ আইওয়াশ। যখনই সময় হবে, এরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে দ্বিধা করবে না। এরা দেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায়। তাই আর এদের কোনো বিভ্রান্তিতে পড়া ঠিক হবে না। এরা ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি হেফাজতের ১৩ দফা বাতিলের দাবি জানান।
হেফাজত ও ১৩ দফা : হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। কওমিভিত্তিক ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর হাত ধরে শতাধিক কওমি আলেমের সমন্বয়ে ‘অরাজনৈতিক’ এই সংগঠনটির জন্ম নেয়। ২০১১ সালে সরকার নারী উন্নয়ন নীতিমাল প্রণয়ন করার সময় এর তীব্র বিরোধিতার মাধ্যমে সংগঠনটি আলোচনায় আসে। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হেফাজতের মূল ভূমিকা দেখা যায় ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ পরবর্তী মতিঝিলে এক সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে। সরকারকে তা বাস্তবায়নের জন্য তখন আলটিমেটাম দেয় সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি : ১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা। ২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস। ৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। ৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা। ৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা। ৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা। ৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা। ১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা। ১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা। ১২. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। ১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
কমিটি বিলুপ্তির পর ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটি বিলুপ্ত করার প্রায় চার ঘণ্টা পর সোমবার ভোররাতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদ্যবিদায়ী আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আহ্বায়ক ও নূরুল ইসলাম এই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে।
সোমবার ভোররাতে নূরুল ইসলাম তার পেইজবুক পেইজে দেওয়া ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আমিরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার জন্য। আমি তার নির্দেশে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করছি। আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, সদস্য সচিব বা মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি নূরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। সঙ্গে অরাজনৈতিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে দুজন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। তারা হলেন, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। মোট ৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলো। এই ৫ সদস্যের মাধ্যমে আজ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যাবতীয় কার্যক্রম ও কর্মসূচি সুচারুরূপে পরিচালিত হবে ইনশাল্লাহ।’
নূরুল ইসলামের বক্তব্যে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা করার কথা বলা হয়। কিন্তু আহ্বায়ক কে সেটা পরিষ্কার করা হয়নি। পরে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে জানানো হয় কমিটির আহ্বায়ক থাকবেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মহিবুল্লাহ বাবুনগরী আগের কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আর নুরুল ইসলাম মহাসচিব ছিলেন। মহিববুল্লাহ বাবুনগরী সম্পর্কে জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে প্রতিনিধি কেশব বড়ুয়া জানান, রবিবার রাত ১১টা ১৯ মিনিটে ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের এক ভিডিওবার্তায় হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি হেফাজতের কর্যাক্রম পরিচালনার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর রাত আড়াইটার দিকে হেফাজতের সাংগঠিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রথমে তিন সদস্যের একটি কমিটি হেফাজতে ইসলামের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে দেওয়া হয়। পরে তিনজনের সঙ্গে আরও দুজনের নাম যুক্ত করে পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন নূরুল ইসলাম। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সদ্যবিদায়ী আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের বিদায়ী কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান। তিনি জানান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আরও কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন কমিটি গঠন করবে।
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-সহিংসতার পর হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। বিক্ষোভ-সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন জুনায়েদ বাবুনগরী। সোমবার ভোররাতে তার নির্দেশে পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া রবিবার সকল কওমি মাদ্রাসায় প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
শফীপন্থি হেফাজত নেতা মঈনুদ্দীন রূহী বলেন, হেফাজতে ইসলামকে রক্ষা করতে হলে বর্তমান নেতৃত্বের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পরিহার করতে হবে। শফী হুজুরের নীতি আদর্শে ফিরে এসে ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই কেবল হেফাজতে ইসলামের হারানো গৌরব ফিরে আসবে। তিনি বলেন, বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামকে ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে। হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তি, আহ্বায়ক কমিটি সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা ওই ছিনতাইকারীদের আহবান করি শফী হুজুরের নীতি-আদর্শে ফিরে আসবেন তারা। হেফাজতের ইমেজ নষ্টকারী নেতাদের জনতার আদালতে বিচার দাবি করেন রুহী। হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি কার্যকর কোনো কমিটি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে বর্তমান হেফাজত নেতৃত্বের একজন বলেন, হেফাজতের দুই গ্রুপের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসা হবে। ঐক্যবদ্ধ হেফাজত এখন আমাদের একমাত্র নীতি হবে। দুই পক্ষ মিলে শক্তিশালী হেফাজত নেতৃত্বই কেবল পুনরুদ্ধার করতে পারে হেফাজতের ভাবমূর্তি।
সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এইচ, ২৭ এপ্রিল