জাতীয়

নতুন আতঙ্ক রূপ বদলানো করোনার বাংলা ধরন

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল – করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারত, বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া। প্রতিদিনই এ অঞ্চলে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু। এর মধ্যে তো ভারত একদিনে তিন লক্ষাধিক রোগী শনাক্ত হয়ে বিশ্বরেকর্ডই করে ফেলেছে। এতদিন ভাবা হচ্ছিল, ভারতে সংক্রমণের দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের পেছনে রয়েছে দুবার রূপ বদলানো বা ডাবল মিউট্যান্ট করোনা ভাইরাস। কিন্তু এবার দেশটিতে সন্ধান মিলেছে করোনার ট্রিপল মিউট্যান্ট ধরনের। মূলত পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ার কারণেই নয়া ধরনটির পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে বেঙ্গল স্ট্রেন। এর আগে করোনা ব্রিটিশ স্ট্রেন, আফ্রিকান স্ট্রেন, ব্রাজিল স্ট্রেনের নাম শোনা গেলেও এবারই প্রথম বেঙ্গল স্ট্রেনের নাম শোনা গেল।

কতটা ভয়ঙ্কর এই ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’? প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই স্ট্রেনের সংক্রমিত করার ক্ষমতা সম্ভবত করোনার অন্য সব ধরনের চাইতে অনেক বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, যদি কেউ এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েও থাকেন এবং টিকাও নেন, তা হলেও তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। বর্তমানে মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে ট্রিপল মিউট্যান্ট করোনার জন্যই লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ডাবল মিউট্যান্টের সঙ্গে ট্রিপল মিউট্যান্ট রীতিমতো দাপট দেখাতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় ভাইরাসের এই ধরনের লাগাম টানা না গেলে এবার ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে করার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতে যেখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে, সেখানে এক ধাক্কায় সেই হার বাড়িয়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ বিষয়ে গড়িমসির কোনো জায়গা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেন ঠিক সময়ে ধরা না যাওয়ার কারণেই হয়তো অগোচরে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’। ভাইরাস যত ছড়ায়, সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। এই নয়া স্ট্রেনটি শিশুদেরও সংক্রমিত করছে। তবে এখনো পর্যন্ত এই নয়া ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনো তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।

যদিও প্রশ্ন উঠছে- এখনো পর্যন্ত যে টিকাগুলো মানুষের হাতে রয়েছে, তা দিয়ে কি এই নয়া মিউট্যান্টকে রোখা সম্ভব কিনা? যে তিনটি পৃথক স্ট্রেনের সমন্বয়ে এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের জন্ম, তার মধ্যে দুটি শরীরে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হার মানাতে সক্ষম। ফলে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে তা রোধ করা যাবে না। কাজেই উপলব্ধ টিকায় তা রোধ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এ/ ২৩ এপ্রিল

Back to top button