অভিমত/মতামত

ভিনদেশি প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু

ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ

চার বছর আগে হঠাৎ একটি ফোনে আমন্ত্রণ পেলাম একটি ‘আজাদি অনুষ্ঠানে’ যাওয়ার। মেয়েটি জানাল, তারা ভারতবর্ষে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার আজাদির উৎসব করবে। মেয়েটি অবাঙালি ভারতীয় নন্দিতা চতুর্বেদী। ভারত থেকে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় পড়তে এসেছে। বলল, তার সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হওয়া আরেকটি অবাঙালি ভারতীয় মেয়ে মেঘনা চন্দ ও একজন পাকিস্তানি ছাত্র শাহনেওয়াজসহ আরও কিছু বন্ধু।

যথা সময়ে স্থানীয় একটির চার্চে গিয়ে অবাক হলাম। অনেক ছবি ঝোলানো, যাতে রয়েছে সেই সময়ের সামনের কাতারের হিন্দু–মুসলিম রাজনীতিবিদদের ছবি। তার মধ্যে দেখি আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তারা জানাল, শুনেছি আপনি কাজী নজরুলকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেন, পড়াশোনা করেন। এ জন্য আপনাকে খুঁজে বের করেছি। জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা নজরুল সম্পর্কে কি জানো? তারা বলে, ইন্টারনেট খুঁজে আমরা নজরুল ইসলামের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা পড়েছি। সাহসী এই কবিই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেছিলেন।

এই তরুণেরা কোনো বাংলা জানেন না। কিন্তু এভাবেই ধারণ করছেন আমাদের ঐতিহ্য। অনুষ্ঠানে মেঘনা চন্দ খালি গলায় বাংলা, হিন্দি আর ইংরেজি ভাষায় সেই গানটি গাইল—‘বিস্তীর্ণ দুপারের অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনে, নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি, গঙ্গা বইছো কেন।’ প্রাণ উজাড় করে গাচ্ছিল মেয়েটি। অনুষ্ঠানেজুড়ে মানবতার জন্য গভীর উদ্বেগ সবাইকে একসঙ্গে বাঁধনের একটি আবহ তৈরি করেছিল।

কোথাও একটি ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পেলাম। আর বুকটা ভরে গেল অজানা এক প্রত্যাশায়। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দূর থেকে উপমহাদেশের অনবরত অশান্তি দেখে মনে হচ্ছিল, কোথা থেকে শুরু হবে একটি শান্তি প্রক্রিয়া। দুই বিশ্বযুদ্ধের সময় ১০০ মিলিয়ন মানুষের মৃতদেহের ওপর দিয়ে হেঁটে আজ ইউরোপ ও সেই শত্রু দেশগুলোতে বন্ধুত্ব, ব্যবসা ও সমঝোতার প্রতিযোগিতা চলছে। আর আমরা এখনো আণবিক বোমা ও ঘৃণার অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি। প্রবাসে থেকে চেষ্টা করলে হয়তো এই সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার জাল থেকে উত্তরণের একটি আশা থাকতেও পারে।

মনে পড়ে, উত্তর আমেরিকা পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আপনা) ২০০৫ সালে যখন উত্তর আমেরিকা ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে তাদের বার্ষিক কনভেনশনে দাওয়াত করল। আমি তখন উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তাদের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে আমাদের বক্তৃতার পালা। বললাম, যেসব কারণ নিয়ে আজ আমরা দ্বিধাবিভক্ত তার সমাধান না হলে আমার যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গভীর কণ্ঠে বললাম, আমরা হয়তো এখান থেকেই উপমহাদেশের শান্তির যাত্রা শুরু করতে পারি। সেই সময় মারমুখী ভারত আর পাকিস্তান আণবিক বোমা নিয়ে ছিল মুখোমুখি। বললাম, যেসব কারণে আমরা দ্বিধাবিভক্ত তার সমাধান না হলে আমাদের উত্তরণের পথ নেই।

এন এইচ, ২০ এপ্রিল

Back to top button