জাতীয়

করোনা রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, ঠাঁই হচ্ছেনা হাসপাতালে

ঢাকা, ০৮ এপ্রিল – গত দুই সপ্তাহে ১০ গুণের বেশি করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে অনেকে সেবা পাচ্ছেন। ঢাকার হাসপাতালে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ঠাঁই নাই’ অবস্থা। হাসপাতালে যারা আসছে তাদের বেশির ভাগেরই শ্বাসকষ্ট। ভর্তির পর একজন রোগীকে কমপক্ষে আট-দশ দিন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। কারো কারো আরো বেশি লাগছে। ফলে বেড খালি হয় কম। প্রতিদিন যা খালি হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি রোগী থাকে ভর্তির জন্য। বেড না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে রোগীদের। শ্বাসকষ্ট থাকায় এসব রোগীর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা জায়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করিডরে রোগী ও স্বজনে ঠাসাঠাসি। যেমন ভিড় আউটডোরে, তেমনি ভর্তি রোগীদের। মেডিসিন বিভাগে ভিড় যেন উপচে পড়ছে। অনেকেই ছুটছে করোনা পরীক্ষার জন্য, আবার কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে এসেছে চিকিৎসকের কাছে। কারো অল্প জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা, আবার কারো হালকা শ্বাসকষ্ট। জরুরি বিভাগে যারা আসছে, তাদের বেশির ভাগেরই শ্বাসকষ্ট। ওই হাসপাতালের করিডরে সামসুল ইসলাম নামের কেরানীগঞ্জের আটি বাজারের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘বাসার তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাবার বয়স ৭২ বছর, আগে থেকেই অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস। আক্রান্ত হওয়ার দুই দিন পর্যন্ত কিছুটা ভালো ছিল, কিন্তু এর পর থেকেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা প্রথমে আইসিইউয়ের কথা বললেও এখানে আইসিইউ খালি না থাকায় শুধু অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কিছুই করার নাই। প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে খরচ চালানোর অবস্থা নাই। যা হওয়ার হবে।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বাইরে থেকে দৃষ্টিনন্দন ও নিরিবিলি পরিবেশ দেখা গেলেও ভেতরে রোগীতে ঠাসা। ২৭৫ বেডের এই হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত রোগী ছিল ৪১১ জন। অর্থাৎ ১৩৬ জন অতিরিক্ত রোগী ছিল। এই হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেডের সবগুলোই রোগীতে ভরা। প্রতিদিন যে কয়টি বেড খালি হয়, মুহূর্তেই তা ভরে যায় অপেক্ষারত রোগীদের মাধ্যমে। তবে বেশির ভাগই এখানে ঠাঁই না পেয়ে ফিরে যায় অন্য হাসপাতালে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহম্মেদ বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রোগী যেভাবে বাড়ছে, এটা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন : ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করব’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এক অনুষ্ঠানে আবারও বলেন, ‘সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না; হাসপাতাল ও বেড বাড়িয়েও কূল পাওয়া যাবে না। সংক্রমণ রোধ করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেট হাসপাতালেও ঠাঁই নেই। ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ৯৬টি জেনারেল ও ২২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে গতকাল সবগুলোতেই রোগী ছিল। পুরান ঢাকার আজগর আলী, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার, কল্যাণপুরের বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সবগুলো বেডই পরিপূর্ণ ছিল রোগীতে। গত কয়েক দিনে সুস্থ হয়ে এসব হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা খুবই কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ঢাকার বড় ১০টি সরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৭৩৬টি জেনারেল বেডের মধ্যে দুই হাজার ৪৪১টিতে রোগী ছিল, আর ১৩১টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১২১টিতেই রোগী ছিল।

কিন্তু বাস্তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও বেড খালি ছিল না। একইভাবে বেসরকারি ১০টি হাসপাতালের ৮১৪টি জেনারেল বেডের মধ্যে ৬৮১টি এবং ১৭৩টি আইসিইউয়ের মধ্যে ১৬৪টিতেই রোগী ছিল। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, আপাতত অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে এখন ১৪ হাজার ৫৭৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১০ হাজার ২২টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও ৮৯৭টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে। আর সব মিলিয়ে হাসপাতালে করোনা রোগী আছে পাঁচ হাজার ২০৮ জন। এর মধ্যে মোট জেনারেল বেডে রোগী চার হাজার ৭৭৫ জন ও আইসিইউতে ৪৩৩ জন। মোট জেনারেল বেড ৯ হাজার ৯১৮টি ও আইসিইউ বেড ৬০২টি।

তিনি বলেন, ঢাকায় এখন যে অবস্থা চলছে, সেটা কেটে যাবে সপ্তাহখানেক পরেই। আগামী ১৪ এপ্রিল মহাখালীতে এক হাজার ৫০০ বেডের কভিড সেন্টার চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। ওই সেন্টারে ২০০টি থাকবে আইসিইউ ও এইচডিইউ বেড। ক’দিনে এত করোনা রোগী আগে দেখেনি বাংলাদেশ। মহামারি করোনাভাইরাসে আবারো রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৪৭ জনে।

আজ বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৭টি পরীক্ষাগারে ৩৪হাজার ৬৬৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৩৪হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৮লাখ ৮২হাজার৫৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক শূন্য ২শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৯শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩শতাংশ।

বিশ্ব পরিস্থিতি: বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৩০৭ জন। আর এ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১০ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ৯২৪ জন। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।

সুত্র: বিডি২৪লাইভ
এন এ/ ০৮ এপ্রিল

Back to top button