এশিয়া

এবার মিয়ানমারে বাস থামিয়ে যাত্রী পেটাচ্ছে সেনারা

নেপিডো, ০৫ এপ্রিল – বিক্ষোভকারীদের নয়, এবার বাস থেকে নামিয়ে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার ইয়াঙ্গুনের ওক্কালাপা শহরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন জান্তারা বাস থামিয়ে বলপূর্বক টেনেহিঁচড়ে যাত্রীদের নামিয়ে লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে আঘাত করেছে এবং প্রবলভাবে লাথির পর লাথি মেরেছে।

উত্তর ওক্কালাপা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থুধামায় চলতে থাকা ইয়াঙ্গন বাস সার্ভিসের গাড়িগুলোকে সিগন্যাল দিয়ে রাস্তার পাশে থামানো হয়। এরপর সেনা সদস্যরা বাসের ভেতরে ঢুকে যাত্রীদের ধরে ধরে জোরপূর্বক টেনে নিচে নামায়।

ওদেরকে ‘নিলডাউন’ করতে বলা হয়, শুরু হয় অত্যাচার। শুধু যাত্রীদের পিটিয়েই ওরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, বাসের চালকসহ অন্য কর্মীদেরও তারা এই অত্যাচার নির্যাতন থেকে রেহাই দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন : ব্যাংককে অগ্নিদগ্ধ তিনতলা বাড়ি ধসে নিহত ৫

এ ঘটনার পর থেকে খবর পেয়ে ওই বাসগুলো গন্তব্যে যেতে অন্য রাস্তা ব্যবহার করতে শুরু করে। চালকদের রুট পরিবর্তনের খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা আবাসিক ওয়ার্ডগুলোতে চিৎকার করতে করতে গুলি চালাতে থাকে।

এ সময় এলাকায় কী ঘটছে, তা দেখতে ঘর থেকে বের হয়েই বিপদে পড়েছেন ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। এদের ধরতেই সেনারা সংশ্লিষ্টদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে।

বাসে থাকা আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সেনারা প্রথমে বাসচালককে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর পুরুষ যাত্রীদের লাথি দিতে থাকে আর বলে-যুদ্ধ কর আমার সঙ্গে। মহিলা যাত্রীদের চুল ধরে টানাটানি করে এবং গালে থাপ্পড় মারতে থাকে।’

শনিবার পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য ইরাবতী। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৫৫৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে তারা।

সীমান্তে সীমান্তে নারী নেতৃত্বে বিক্ষোভ

কাচিনেই জন্ম ওর। নাম সোই লিং। বয়স এখন ২৬। সৈনিকদের সঙ্গে ভারী অস্ত্র হাতে নিজের উপস্থিতিকে দেখছেন খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে। মিয়ানমারের একেবারের উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকা কাচিন। দশকজুড়ে তিনি দেখে এসেছেন সরকারি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কীভাবে টিকে আছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। এমনকি এসব যুদ্ধে চড়া মূল্যও চুকাতে হয়েছে তাদের।

তবু কখনো তার মনে হয়নি তারা অনিরাপদ। এটাও মনে হয়নি কখনো অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এখন তার মনে হয় জান্তাদের বিরুদ্ধে গড়তেই হবে, নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে।

চীন সীমান্তবর্তী এলাকা কাচিন। খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এ এলাকার স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সাল থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছে কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি। কিন্তু সম্প্রতি মিয়ানমারের চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে তারা গণতন্ত্রকামীদের পক্ষে যুদ্ধ করে তাতমাদাওকে পরাস্থ করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন এই একাত্মতা তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মিতে (কেআইএ) যোগ দেওয়াদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগই মহিলা। সোই লিং বলেন, ‘এখন প্রতিটি দিনই আমার জন্য কঠিন। সহকর্মীদের নিয়ে আমার উদ্বেগ কাটছে না। এখন জান্তারা দেশজুড়ে বেআইনিভাবে নিষ্পাপ মানুষগুলোকে হত্যা করছে। বাড়িতে বা রাস্তায় কোনো মানুষই নিরাপদ নয়। এ কারণেই আমি ভীষণ শঙ্কিত।’

ফ্রন্টিয়ারকে এভাবেই নিজের মানসিক অবস্থার কথা জানালেন ছদ্মনাম ব্যবহার করা সোই। জান্তাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। জানালেন সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা।

মিতকিয়ানায় সেদিন বিক্ষোভ তুঙ্গে। সবার সামনের সারিতে সোই। পুলিশ আর সেনাদল তাদের ঘিরে রেখেছিল। শুরু হয়েছে ধরপাকড়। সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরেই তিনি কৌশলে পেছনে থাকা জনতার সঙ্গে মিশে যান। পরদিনই গ্রেফতার করা হয়েছিল ৭৪ জন বিক্ষোভকারীকে। কিন্তু গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বাঁচেন সেদিন।

তার মতো বহু নারী এভাবে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে আছেন মিয়ানমারজুড়ে।

দ্য উইমেন’স লীগ অব বার্মার ধারণা, বিক্ষোভকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ মহিলাই নিজেদের এ অভ্যুত্থানে উৎসর্গ করে বিভিন্ন পন্থায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ফ্রন্টিয়ারকে সাক্ষাৎকার দেওয়া অধিকাংশ নারীই দাবি করেছেন, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান চাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরাই বেশি স্পষ্টবাদী। তাদের কণ্ঠ পুরুষের চেয়ে বেশি উচ্চকিত।

সোই লিং জানান, মাতকিয়ানার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করা যুবক যুবতীরা কাচিন রাজ্যের নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে প্রায় প্রতিদিনই। তারা গোপনসভা করছেন, গ্রুপ চ্যাটে অংশ নিচ্ছেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে।

সূত্র : যুগান্তর
এন এইচ, ০৫ এপ্রিল

Back to top button