হবিগঞ্জ

ভাষা সৈনিক জাকারিয়া চৌধুরী আর নেই

হবিগঞ্জ, ২৫ মার্চ – হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক এবং দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক জাকারিয়া চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকাল ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা কবি জাকারিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর ইউনিয়নের সম্মুখা চৌধুরী বাড়ি। তার বাবা ইয়াইয়া চৌধুরী ছিলেন পাকিস্থান সরকারের ডেপুটি ম্যাজিট্রেট। দেশ স্বাধীনের পর তিনি কুষ্টিয়া মহাকুমার প্রশাসক ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে ১৯৩৩ সালের ১৮ নভেম্বর জাকারিয়া চৌধুরী ভারতের আসাম প্রদেশের শিবসাগরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শুরু মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ও আসামের করিমগঞ্জে, তারপর সিলেটে। করিমগঞ্জের স্কুলে অধ্যায়নকালে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৫৫ সালে অর্থনীতিতে সম্মান ডিগ্রী অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্তায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিল করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন তিনি। এরপর ১৯৫৭ সালে লন্ডনে লিঙ্কনস ‘বার-এট-ল’ পড়ার জন্য ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় এনে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা স্বাধীন করার পরিকল্পনায় পূর্বসূরী ‘ নামে গােপন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

আরও পড়ুন : সিলেট-৩ আসনে নৌকা চান ইনাম চৌধুরী

১৯৬৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন লন্ডনে এক সংক্ষিপ্ত সফরে গেলে জাকারিয়া চৌধুরী তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতার কথাটা বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। সেই অবধি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত থাকে।

১৯৬৮ সালে ‘ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাই কমিশন জবরদখলের নেতৃত্ব দেন ও প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যারিস্টার স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে মামলা পরিচালনার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরণ করেন। আইয়ুব শাহী পতনের পর ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পুনরায় লন্ডন যান এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ব্যক্তিগত দূত হিসাবে লন্ডনে অবস্থান নিতে বলেন। তখন এয়ারপাের্টের কর্তৃত্ব পাকিস্তান বিমান বাহিনী নিয়ে নেয় এবং আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিরাপত্তা আরোপ করে। যেহেতু তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তান সরকারের কাছে চিহ্নিত ছিলেন।

জাকারিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি হাওর এলাকায় হওয়ায় সেসব এলাকার আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের একপর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে সেখানকার সম্পদ এবং সম্ভাবনাকে সু-সংগঠিত করে এলাকার উন্নয়ন সু-সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। যার ফলে ১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান হাওড় উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড। জাকারিয়া খান চৌধুরী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ আসন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৯১ ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।

সূত্র : সিলেটভিউ
অভি/ ২৫মার্চ

Back to top button